বিবিসি ২০২৩ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ও প্রেরণাদায়ী ১০০ জন নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে।
তাদের মধ্যে আছেন মানবাধিকার আইনজীবী আমাল ক্লুনি, হলিউড তারকা আমেরিকা ফেরেরা, নারীবাদী আইকন গ্লোরিয়া স্টেইনহেম, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, সৌন্দর্য বিষয়ক উদ্যোক্তা হুদা কাতান এবং ব্যালন ডি'অর বিজয়ী ফুটবলার আইতানা বনমাতি।
বিশ্বজুড়ে চরম উষ্ণতা, দাবানল, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ বছরের আলোচিত বিষয় ছিল। এবারের তালিকায় এমন নারীদের স্থান দেয়া হয়েছে যারা তাদের নিজ নিজ কমিউনিটিতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি মোকাবেলায় কাজ করছেন৷
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ২৮) আগে প্রকাশিত এবারের তালিকায় স্থান পাওয়া ১০০ জনের মধ্যে ২৮ জনই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন।
নামগুলো কোনো নির্দিষ্ট ক্রমে তালিকাভুক্ত করা নয়।
বিউটি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা
ইরাকী অভিবাসী মা-বাবার ঘরে হুদা কাতানের জন্ম। যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী হুদা কাতানের বেড়ে ওঠা ওকলাহোমাতে। সৌন্দর্যের প্রতি তার অনুরাগের কারণে প্রথাগত কর্পোরেট ক্যারিয়ার বেছে নেননি তিনি।
লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি বিখ্যাত মেক-আপ প্রশিক্ষণ স্কুলে ভর্তি হন হুদা। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি রাজপরিবারসহ প্রথম সারির সেলিব্রিটিরা হুদা কাতানের গ্রাহক হয়ে যান।
৫০ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার সংখ্যা নিয়ে ইনস্টাগ্রামে সর্বাধিক অনুসরণ করা বিউটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন তিনি।
২০১৩ সালে ফলস আইল্যাশ বাজারে নিয়ে আসার মাধ্যমে কাতান তার প্রসাধনী ব্র্যান্ড হুদা বিউটি'র যাত্রা শুরু করেন। এখন তার বিলিয়ন-ডলারের ব্র্যান্ডে ১৪০ টির বেশি বিউটি পণ্য রয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী দেড় হাজারের বেশি দোকানে বিক্রি হয়।
স্কুল শিক্ষক
৯/১১ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে বেড়ে ওঠা মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক সারাহ ওট জানান তিনি একসময় অপতথ্য বা গুজবে বিশ্বাস করতেন।
বিজ্ঞান শিক্ষিত হওয়ার পরও সারাহ একসময় জলবায়ু পরিবর্তন সত্যিই হচ্ছে কি না তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।
সারাহ জানান শুরুতে তিনি ভুলের মধ্যে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্স এডুকেশনের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দূত হন।
এখন জর্জিয়ায় বসবাস করা সারাহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি দিয়ে তার শিক্ষার্থীদের শারীরিক শিক্ষার ধারণাগুলো শেখান। সেই সাথে পরিবেশ বিষয়ক সমস্যাগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ান।
যদিও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আপনি সবাইকে একসাথে পাবেন না, তারপরও আমরা একা সবকিছু করতে পারি না। অ্যাক্টিভিজম হচ্ছে বাগানের মতো, এখানে আপনাকে কিছুটা বিরতি নিতে হবে এবং বিদ্যমান অবস্থাকে সম্মান জানাতে হবে।
সারাহ ওট
মডেল এবং ইনফ্লুয়েন্সার
খুব কম ৯৩ বছর বয়সীই বলতে পারবেন ইন্সটাগ্রামে তাদের দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি অনুসারী আছে। তবে ইতালির সবচেয়ে প্রবীণ বডি পজিটিভিটি (যারা বিশ্বাস করেন সব ধরণের শরীরই সুন্দর) ইনফ্লুয়েন্সার লিসিয়া ফার্টজের জন্য এটা সবে শুরু।
লিসিয়া ফার্টজ ২য় বিশ্বযুদ্ধে পার করে এসেছেন, নিজের ২৮ বছর বয়সী মেয়ে এবং স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা সহ্য করে এসেছেন।
তার নাতি যখন তাকে একটি ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইল খুলে দেন তখন তার উজ্জল পোশাক এবং প্রাণবন্ত হাসি তাকে রাতারাতি একজন সোশ্যাল মিডিয়া তারকা বানিয়ে ফেলে।
তিনি একটি আত্নজীবনী লিখেছেন এবং ৮৯ বছর বয়সে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের কভারে নগ্ন পোজ দিয়েছেন।
তিনি একজন বয়সবাদ-বিরোধী, নারীবাদী এবং এলজিবিটিকিউ কর্মী। তিনি বডি পজিটিভিজমের প্রচারক এবং বয়স্ক শরীর নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়ার কাজ করছেন।
আদিবাসী এবং এলজিবিটিকিউ অধিকারকর্মী
থাইল্যান্ডের মায়ানমার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাস করা ম্যাচা ফোর্ন-ইন জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংঘাত দুটোর প্রভাবই অনুভব করেছেন এবং সেজন্যেই তিনি সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন।
তিনি সাংসান আনাকোট ইয়াওয়াচন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটি রাষ্ট্রহীন এবং ভূমিহীন আদিবাসী নারী, মেয়ে এবং এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হাজার হাজার তরুণকে শিক্ষাদান এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করে।
একজন জাতিগত সংখ্যালঘু/আদিবাসী, লেসবিয়ান ও নারীবাদী হিসাবে ম্যাচা ফ্রন-ইন এই অঞ্চলে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা বন্ধের আন্দোলনে একজন পথিকৃত। পাশাপাশি তিনি বাস্তুচ্যুত এবং বঞ্চিত জনগণের জন্য ভূমি অধিকার এবং জলবায়ু ন্যায়বিচারের পক্ষেও কাজ করেন।
আদিবাসী সম্প্রদায়, এলজিবিটিকিউ, নারী ও মেয়েদের যথাযথ অংশগ্রহণ এবং মতামত ছাড়া টেকসই জলবায়ু সমাধান সম্ভব নয়।
ম্যাচা ফোর্ন-ইন
পশু পালন
পাকিস্তানের দুর্গম অঞ্চল শিমশাল ভ্যালির সর্বশেষ ওয়াখি রাখালদের একজন আফরোজ-নুমা প্রায় তিন দশক ধরে ছাগল, ইয়াক আর মেষপালন করে আসছেন।
কয়েক শতাব্দী ধরে শিমশাল ভ্যালিতে নারী রাখালদের এই ঐতিহ্য আজ প্রায় হারাতে বসেছে। মা ও দাদী-নানীদের কাছ থেকে এই ব্যবসা শিখেছিলেন আফরোজ-নুমা।
প্রতি বছর এই রাখাল নারীরা তাদের পশুর পালকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থিত চারণভূমিতে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে তারা দুগ্ধজাত সামগ্রী তৈরি করেন আর তাদের পশুরা খাবার খায়।
পশুপালন থেকে করা আয় দিয়ে এই নারীরা তাদের গ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন, এবং সন্তানদের পড়াশোনা করান। আফরোজ-নুমা গর্বের সাথে এখনও স্মরণ করেন যে, তিনিই শিমশাল ভ্যালির প্রথম নারী হিসেবে একজোড়া জুতো কিনেছিলেন।
টিভি উপস্থাপিকা
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন হাতেগোনা যে কয়জন মহিলা সংবাদ উপস্থাপক তাদের দেশে সম্প্রচার কাজ চালিয়ে যান তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন হোসাই আহমেদজাই।
মিডিয়ায় কাজ করা নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও হোসাই আহমদজাই শামশাদ টিভিতে তার কাজ চালিয়ে যান।
এরপর থেকে তিনি অনেক তালেবান কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তবে তাদের প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হন এবং তাদের কাজ নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে পারেন না।
আইন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করা আহমেদজাই সাত বছর ধরে গণমাধ্যমে কাজ করছেন। তালেবান দ্বারা কঠোরভাবে সীমিত করা মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন তিনি।
ট্রাক চালক
ট্রাক চালক কার্লা এলিজাবেথ ফ্রাগোসো ইউগার্তে ১৭ বছর ধরে মেক্সিকোর পুরোপুরি পুরুষ-প্রধান পরিবহন খাতে কাজ করে আসছেন। এই সময়ের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বিপজ্জনক অঞ্চলেও ট্রাক চালিয়েছেন কার্লা।
দুরাঙ্গো নামক এলাকা থেকে উঠে আসা কার্লা মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন। চার সন্তানের মা কার্লার নাতি-নাতনির সংখ্যা সাত।
মেক্সিকোতে নারী ট্রাক চালকরা 'ট্রেইলেরা' হিসেবে পরিচিত। পুরো পেশাগত জীবনে মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় মালপত্র পৌঁছে দেয়ার কাজ করেন কার্লা।
তিনি এখন নতুন চালকদের প্রশিক্ষণ দেন এবং পুরুষ-প্রধান এই খাতে লৈঙ্গিক সমতা আনার লক্ষ্যে অন্য নারীদের এ পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন।
টেকসই পর্যটন বিশেষজ্ঞ
ভ্রমণ এবং পর্যটন শিল্পের হাতেগোনা কয়েকজন জলবায়ু বিজ্ঞানীর একজন সুসান এটি এই শিল্পকে আরও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
অ্যাডভেঞ্চার বিষয়ক গ্রুপ ইনট্রেপিড ট্রাভেলের গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট ম্যানেজার হিসাবে কাজ করেন তিনি। তার উদ্যোগের ফলে বিজ্ঞান-ভিত্তিক কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্য নিয়ে প্রথম ট্যুর অপারেটরের পরিচিতি পায় কোম্পানিটি।
কার্বণ নিঃসরণ কমাতে চায় এমন পর্যটন প্রতিষ্টানের জন্য এটি একটি ওপেন-সোর্স গাইড লিখেছেন সুসান। এটি ট্যুরিজম ডিক্লারসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ৪০০টি ভ্রমণ সংগঠন, সংস্থা এবং পেশাদারদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যারা জলবায়ু জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
আজ আমরা দেখছি যে পরিবেশগত প্রভাব কমাতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য স্থাপন, নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদী কার্বণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যবসার সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। এর মাধ্যমে তারা জলবায়ু নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্ব স্বীকার করছে।
সুসান ইতি
গ্রীন এনার্জি পরামর্শক
তাজিকিস্তানের দূর্গম অঞ্চলে বসবাসকারী নারীরা প্রায়ই বিদ্যুৎ বা জ্বালানি কাঠের জন্য সংগ্রাম করেন। পরিবেশ দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প সহ-সমন্বয়ক নাতালিয়া ইদ্রিসোভা এই সংকট দূর করার জন্য কার্যকর পরিবেশবান্ধব সমাধান খুঁজেন এবং নারীদের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ও উপকরণ সম্পর্কে শিক্ষিত করেন।
প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তার সংগঠন জ্বালানি সাশ্রয়ী সরঞ্জাম, সৌরচুলা এবং প্রেসার কুকার সরবরাহ করে। এর মাধ্যমে নারীদের সময় বাঁচে এবং তারা জলবাযু-বান্ধব উপায়ে নিজ বাড়িতে লিঙ্গ সমতা অর্জনে সহায়তা পান।
ইদ্রিসোভা এখন জলবায়ু পরিবর্তন মানুষকে বিশেষকরে প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের কীভাবে প্রভাবিত করে সেই বিষয়ে সবাইকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং এই কণ্ঠস্বরগুলি যাতে রাজনৈতিক আলোচনায় শোনা যায় সেই উপায় খুঁজে বের করছেন।
বিশ্বব্যাপী চরম ঘটনাগুলি আমাদের শেষ সতর্কবার্তা দেয় যে মানুষ প্রকৃতিরই অবিচ্ছেদ্য অংশ । আমরা যদি অবহেলা করে প্রকৃতিকে শোষণ করি, তবে আমাদের গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।
নাতালিয়া ইদরিসোভা
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও ইউটিউবার
ম্যাকডোনাল্ডস-এ খন্ডকালীন চাকরির পাশাপাশি পড়াশুনা চালিয়ে অক্সফোর্ড এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জনকারী ভী কাতিভুর এই যাত্রা সারা বিশ্বের হাজারো মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেন ভী কাতিভু, যেখানে একটি পিছিয়ে পড়া আর্থ-সামাজিক অবস্থান থেকে এই পর্যায়ে উঠে আসার গল্প বলতেন তিনি। চ্যানেলটিতে তার মতো অন্যদের জন্য পড়াশোনার টিপস ও নানা ধরণের রিসোর্সও প্রদান করেন তিনি।
তখন থেকেই কাতিভু এমপাওয়ারড বাই ভী নামের একটি প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিনিধিত্বহীন এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষাকে আরো বেশী সুগম করতে কাজ করেন তিনি।
কাতিভু তরুণদের জন্য একটি সেলফ-হেল্প বিষয়ক বই লিখেছেন এবং বর্তমানে এডুকেশন লিডারশীপ নিয়ে পিএইচডি করছেন।
শিক্ষার্থী ও সামাজিক উদ্যোক্তা
ইরানে নিজের আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলে কিয়ান্নি বুঝতে পারেন যে সেখানের নিজস্ব ভাষায় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য অপ্রতুল। এরপর কিয়ান্নি এই সংক্রান্ত নানা উপাদান ফার্সিতে ভাষান্তর করার কাজ শুরু করেন।
এই কাজ আরো বিস্তার লাভ করে যখন কিয়ান্নি ক্লাইমেট কার্ডিনালস নামের একটি অলাভজনক সংস্থা গড়ে তুলেন। তরুণদের এই সংস্থা জলবায়ু বিষয়ক নানা তথ্য উপাত্ত ইংরেজি থেকে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা শুরু করে - যাতে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষাভাষীরাও তথ্যগুলো জানতে পারে।
কিয়ান্নির সাথে এখন ৮০ টি দেশের ১০,০০০ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করে। তারা ইতোমধ্যে জলবায়ু বিষয়ক লেখা ১০ লাখ শব্দ একশোটিরও বেশী ভাষায় অনুবাদ করেছেন।
কিয়ান্নির লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু বিষয়ক বৈজ্ঞানিক ধারণা ভাষার দেয়াল ভেঙ্গে ছড়িয়ে দেয়া।
তরুণ অ্যাক্টিভিস্টরা একটি বৈশ্বিক জলবায়ু কার্যক্রম নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন, লাখো মানুষকে প্রতিবাদ করতে নামিয়েছেন, জীবাশ্ম জ্বালানীর প্রসার রোধে হাজারো পিটিশন পরিচালিত করেছেন এবং জলবায়ু সংক্রান্ত উদ্যোগের জন্য কোটি কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছেন। গোটা বিশ্ব যে চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার মোকাবেলা না করে আমরা আমাদের বয়স বা অভিজ্ঞতার দোহাই দিতে পারি না।
সোফিয়া কিয়ান্নি
আলোকচিত্রী
আলোকচিত্রী, লেখক ও ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক্সপ্লোরার আরতি দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ঘুরে ঘুরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে পরিবেশের পরিবর্তন হচ্ছে সেগুলো তুলে আনেন।
ভূগর্ভস্থ পানির ব্যাপক হ্রাস, বাসস্থান ধ্বংস, এবং শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ কীভাবে জীববৈচিত্র্যকে ধ্বংস করে এবং জমি সঙ্কুচিত করে লাখো মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে এবং বিভিন্ন প্রজাতিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয় সেগুলো আরতি তার কাজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেন।
এক দশকের বেশি সময় ধরে ভারতীয় উপামহাদেশে ব্যাপকভাবে ঘুরেছেন আরতি। তার কাজের মধ্যে পরিবেশ ধ্বংস কীভাবে জীবিকা ও জীববৈচিত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে সেটি ফুটে ওঠে।
মার্জিনল্যান্ডস: ইন্ডিয়াস ল্যান্ডস্কেপ অন দ্য ব্রিংক শীর্ষক বইতে আরতি ভারতের সবচেয়ে বিরূপ আবহাওয়ায় বসবাসকারী মানুষের অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তোলেন।
ভূমি, জল এবং বায়ুর সাথে আমাদের মৌলিক যে সংযোগ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি হারিয়ে গেছে। আর এটিই জলবায়ু সংকটের মূলে রয়েছে, এই সংযোগ পুনরুদ্ধার করা খুবই জরুরি।
আরতি কুমার-রাও
লেখক
কবিতা, ফিকশন এবং নন-ফিকশন সহ ২০ টিরও বেশি বইয়ের লেখিকা ওকসানা জাবুজকোকে ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান লেখক এবং বুদ্ধিজীবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
ফিল্ড ওয়ার্ক ইন ইউক্রেনিয়ান সেক্স এবং দ্য মিউজিয়াম অব অ্যাবানডনড সিক্রেটস বইয়ের জন্য তিনি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত।
তিনি কিয়েভের শেভচেঙ্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিষয়ের স্নাতক এবং শিল্পের দর্শন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী।
তার বই ২০ টির বেশি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ওকসানা তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অ্যাঞ্জেলাস সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান লিটারারি প্রাইজ, ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল অর্ডার অব দ্য লিজিওয়ন অব অনার এবং ইউক্রেনের অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার জিতেছেন।
ভিক্ষুনী
১৯৪০ দশকে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেয়া জেতসুনমা তেনজিন পালমো কিশোরী বয়সে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন।
২০ বছর বয়সে তিনি ভারত ভ্রমণ করেন এবং তিব্বতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হিসাবে নিযুক্ত হওয়া প্রথম পশ্চিমাদের একজন হয়ে ওঠেন।
মহিলা অনুশীলনকারীদের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে তেনজিন পালমো ভারতের হিমাচল প্রদেশে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে এখন ১২০ জনের বেশি নান রয়েছেন।
হিমালয়ের একটি দুর্গম গুহায় ১২ বছর ধরে বসবাস করে খ্যাতি লাভ করেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে তিনবছর তিনি কঠোর ধ্যানে কাটান। ২০০৮ সালে তিনি তিনি জেটসুনমা বা সম্মানিত শিক্ষকের বিরল উপাধিতে ভূষিত হন।
সাংবাদিক
নিজের বয়স ত্রিশ হওয়ার আগে ক্যারোলিনা ডিয়াজ পিমেন্টেল জানতে পারেন যে তিনি অটিজমে আক্রান্ত। তিনি মানসিকভাবে অন্যরকম এটা জানতে পেরে ডিয়াজ কেক বানিয়ে উদযাপন করেন। তিনি একজন পুলিৎজার সেন্টারের গ্রাহক এবং একজন রোজালিন কার্টার স্কলার।
এখন তার বয়স ৩০ এর কোটায় এবং তিনি একজন 'গর্বিত অটিস্টিক'। তিনি বর্তমানে নিউরোডাইভারজেন্স এবং মানসিক স্বাস্থ বিষয়ে পারদর্শী একজন সাংবাদিক।
এছাড়াও মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত মানুষ প্রায়শই যে সামাজিক স্টিগমার শিকার হন সেটি বন্ধ করতে কাজ করেন ডিয়াজ। তিনি বেশ কয়েকটি প্রকল্প বা অলাভজনক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা যারা নিউরোডাইভার্সিটি নিয়ে সচেতনতা তৈরী করতে কাজ করে।
তিনি পুলিৎজার সেন্টারের গ্রান্ট পাওয়া সাংবাদিক এবং রোজালিন কার্টার স্কলার।
ক্লাইমেট ক্যাফের প্রতিষ্ঠাতা
ক্লাইমেট ক্যাফে হল এমন একটি স্থান যেখানে মানুষ পান করতে, আড্ডা দিতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে কাজ করতে একত্রিত হয়। জেস পেপার ২০১৫ সালে স্কটল্যান্ডের একটি ছোট শহরে প্রথম ক্লাইমেট ক্যাফেটি প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি এখন অন্য কমিউনিটিকে তাদের নিজস্ব জায়গা চালু করতে সহায়তা করেন যা একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত।
ক্লাইমেট ক্যাফের অংশগ্রহণকারীরা বলছেন যে ক্যাফেগুলি হচ্ছে এমন স্থান যেখানে তারা জলবায়ু সংকট সম্পর্কে তাদের উদ্বেগগুলো অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করতে পারেন।
জলবায়ু বিষয়ক অনেকগুলি উদ্যোগের নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন জেস পেপার। তিনি রয়্যাল স্কটিশ জিওগ্রাফিক্যাল সোসাইটির একজন সম্মানিত ফেলো এবং রয়্যাল সোসাইটি অফ আর্টসের একজন ফেলো।
কমিউনিটিগুলোতে জলবায়ু বিষয়ক অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হচ্ছে, যেগুলো অনেকাংশেই নারী ও শিশুদের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। যোগাযোগ কীভাবে পরিবর্তনের সূচনা করে, সহনশীলতা তৈরি করে এবং আরো বেশি ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করে সেটি আমাকে সত্যিই অনুপ্রাণিত করে।
জেস পেপার
শিল্পী
সৌন্দর্য নিয়ে প্রচলিত মানদণ্ড ভাঙ্গতে এবং গণমাধ্যমে নারীদের যেভাবে তুলে ধরা হয় তা চ্যালেঞ্জ জানাতে লালা প্যাস্কুইনেলি ২০১৫ সালে উইমেন হু ওয়্যার নট অন আ ম্যাগাজিন কাভার প্রতিষ্ঠা করেন।
এই প্রকল্প নারীদেরকে তাদের শরীর নিয়ে প্রচলিত ন্যারেটিভ যেমন বয়স ও ডায়েটিং সেগুলো পূনর্মূল্যায়ন করার আহবান জানায়। এই প্রকল্প সম্প্রতি এক ক্যাম্পেইন চালায় যা সব আকৃতি এবং আকারের মানুষের সত্যিকারের গল্প তুলে ধরে।
আইনজীবী, কবি, লেসবিয়ান ও নারীবাদী এই কর্মী নারীর সৌন্দর্যের প্রচলিত ধারণাগুলোকে "শ্রেণিবাদী, লিঙ্গবাদী এবং বর্ণবাদী" বলে আখ্যা দেন এবং এগুলো বিদ্যমান লিঙ্গবৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তোলে বলে মনে করেন।
দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা অ্যাক্টিভিস্ট
একটি দুর্ঘটনায় জান্নাতুল ফেরদৌস শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখিকা এবং প্রতিবন্ধী অধিকার প্রচারক হয়ে উঠেন।
জান্নাতুল ভয়েস অ্যান্ড ভিউজ নামের একটি মানবাধিকার সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা যারা অগ্নিদগ্ধ নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে।
পরিবার ও বন্ধুদের কাছে আইভি হিসেবে পরিচিত এই নারী পাঁচটি শর্ট ফিল্ম তৈরী করেন এবং তিনটি উপন্যাস প্রকাশ করে প্রতিবন্ধীতা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষদের বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করেন।
প্রচুর পড়াশোনা করা ফেরদৌস ইংরেজী সাহিত্যে মাস্টার্স ও ডেভেলপম্যান্ট স্টাডিজে ডিগ্রীধারী।
শিল্পী
প্রিন্টমেকিং, ড্রয়িং, পেইন্টিং, ইনস্টলেশন এবং ফিল্ম সহ বিভিন্ন শিল্পে কাজ করা চিলা কুমারী বর্মণ তার কাজের মাধ্যমে রিপ্রেজেন্টেশন, জেন্ডার ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেন।
এই বছর এই শিল্পীর কাজ ব্ল্যাকপুল ইলুমিনেশনস ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়। এটি এমন একটি আলোক উৎসব যা ১৮৭৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে চলে আসছে। ললিস ইন লাভ উইথ লাইট শীর্ষক তার একটি টেকনিকালার ইনস্টলেশন প্রদর্শিত হয় যেখানে একটি আইসক্রিম ভ্যান সবকিছুর কেন্দ্রে ছিল। চিলা কুমারীর বাবা-মা আইসক্রিমের ব্যবসা চালাতেন, সেখান থেকেই তিনি এই ইনস্টলেশনের আইডিয়া নেন।
২০২০ সালে চিলা বর্মন ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড এর স্মরণে ব্রিটেনের এক আর্ট গ্যালারির সামনে একটি ইনস্টলেশন করেন, যেখানে ভারতীয় পুরাণ, গণসংস্কৃতি এবং নারীর ক্ষমতায়ন তুলে ধরেন।
গত বছর তিনি সম্মানসূচক এমবিই খেতাব পান।
মাছ বিক্রেতা
বুওবাসা ঘানার ফুভেমে নামের যে গ্রামের বাসিন্দা, সেটি সবসময় সমুদ্রের পানিতে ভেসে যায়। ফলে বুওবাসা নিজের জীবনেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার হন।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বুওবাসা তার স্বামী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন। কারন জোয়ারের পানি তার গ্রামকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছিলো।
নিজের গ্রামের একজন শীর্ষ মৎস ব্যবসায়ী বুওবাসা তার আশেপাশের অন্য মৎস ব্যবসায়ী নারীদের নিয়ে এমন একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন, যা ভাঙ্গনের মুখে থাকা এলাকার মানুষের সহায়তায় নিয়োজিত।
বুওবাসার সংগঠনটি সপ্তাহে একবার বৈঠকে মিলিত হয়। সেখানে তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীরা যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং যেসকল পরিবার অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে রয়েছেন তাদের সাহায্য করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
প্রতিবার জোয়ারের পানি আমাদের জন্য হতাশা নিয়ে আসে। আমাদের ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মৃত্যুদূত হয়ে আসে এই জোয়ার।
এসি বুওবাসা
প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী
হাইস্কুলে পড়ার সময় দুইবার স্ট্রোক করার পর মারিজেতা মোজাসেভিচের জীবন নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
নিজের জীবনে শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের অভিজ্ঞতার শিকার মোজাসেভিক এখন একজন যুব উপদেষ্টা এবং প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী হিসাবে কাজ করেন।
তিনি স্নায়বিক সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের প্রতি প্রচলিত মনোভাব এবং আচরণকে বদলাতে কাজ করেন।
মোজাসেভিচ লাইফ উইথ ডিসঅ্যাবিলিটি শীর্ষক একটি কর্মশালার আয়োজন করেন, যেখানে তিনি নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতিবন্ধীতা বিষয়ক নানা কুসংস্কারকে চ্যালেঞ্জ করেন।
তিনি ওয়াননিউরোলজি নামক একটি উদ্যোগের দূত, যা স্নায়বিক অবস্থাকে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের একটি অগ্রাধিকারে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করে।
আদিবাসী এবং প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী
কেরা শেরউড-ও'রেগান নিউজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডের তে ওয়াইপোউনামু থেকে আগত একজন কাই তাহু আদিবাসী এবং প্রতিবন্ধী জলবায়ু বিশেষজ্ঞ।
তিনি জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং সামাজিক পরিবর্তনের উপর বিশেষায়িত একটি সামাজিক সংস্থা অ্যাকটিভেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
তার প্রধান কাজ আদিবাসী মাওরিদের ভূমি ব্যবস্থা এবং পূর্বপুরুষদের উপর ভিত্তি করে, যা কিছুদিন আগে পর্যন্তও মূলধারার জলবায়ু আলোচনায় উপেক্ষিত ছিল।
শেরউড-ও'রেগান তার সমাজে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি তুলে ধরতে বিভিন্ন মন্ত্রী, কর্মকর্তা এবং বৃহত্তর নাগরিক সমাজের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি জলবায়ু আলোচনায় আদিবাসী জনগণ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকারের বৃহত্তর স্বীকৃতির জন্যও তিনি কাজ করেন।
আমরা প্রাকৃতিক সম্পদের উত্তোলনবাদী মডেলটি প্রত্যাখ্যান করছি, উঠে দাড়াচ্ছি এবং কমিউনিটিকে সঙ্গে নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছি। এই উপায়টি কাজে আসছে। আমার মতে, অনেক লোক এখন স্বীকার করবেন যে আদিবাসী সার্বভৌমত্বের বাস্তবায়নই জলবায়ু সংকট সমাধানের পথ।
কেরা শেরউড-ও'রেগান
শিক্ষাবিদ ও জলবায়ু কর্মী
কিশোরী সাগরিকা শ্রীরাম স্কুলে জলবায়ু শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
সাগরিকা তার কোডিং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কিডস ফর বেটার ওয়ার্ল্ড গড়ে তুলেছেন। এটি বিশ্বব্যাপী শিশুদের নিজেদের মধ্যে টেকসই উদ্যোগ নেয়ার শিক্ষা দিয়ে থাকে।
অনলাইন ও অফলাইনে পরিবেশ বিষয়ক কর্মশালার মাধ্যমে নিজেদের এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ইতিবাচক কার্যক্রম পরিচালনা করে সাগরিকার এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
দুবাইয়ে এ-লেভেলে পড়াশোনার পাশাপাশি জাতিসংঘের শিশু অধিকার বিষয়ক সংস্থার পরামর্শক দলে যুক্ত থেকে পরিবেশ অধিকার নিয়ে কাজ করেন সাগরিকা।
এটা শুধু বিপদের বার্তা দেয়ার সময় নয়, বরং কাজের সময় যাতে প্রতিটি শিশু টেকসইভাবে বাঁচতে এবং আমাদের পৃথিবীতে আমরা কীভাবে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে চাই তা শিখতে পারে।
সাগরিকা শ্রীরাম
কৃষি উদ্যোক্তা
২০১৬ সালে, টাইফুন নক-টেন ফিলিপাইনের কামারিনেস সুরের অকাংশে আঘাত হানে। টাইফুনটি ওই এলাকা ৮০ শতাংশ কৃষি জমি ধ্বংস করে।
লুইস মাবুলো এই ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে দ্য ক্যাকো প্রজেক্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থাটি টেকসই কৃষি বনায়নের মাধ্যমে স্থানীয় খাদ্য ব্যবস্থাকে রূপান্তর করার লক্ষ্যে কাজ করে।
মাবুলো কৃষকদের ক্ষমতায়ন করেন, ক্ষতিকর খাদ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে দেন এবং গ্রামীণ নেতৃত্বাধীন সবুজ অর্থনীতির জন্য কাজ করেন যাতে জমি চাষ করে যারা তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি আন্তর্জাতিক জলবায়ু নীতির পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন, যেখানে তিনি গ্রামীণ গল্প এবং জ্ঞানকে তুলে ধরেন। তিনি জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ইয়াং চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ স্বীকৃতি পান।
আমি আশাবাদী হই এটি জেনে যে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে তুলছেন আমার মতোই মানুষেরা, যারা সবুজ ল্যান্ডস্কেইপ, একটি যুথবদ্ধ কমিউনিটি, টেকসই এবং সহজলভ্য খাদ্য, বৃত্তাকার অর্থনীতি এবং সমতার নীতি দ্বারা পরিচালিত ভবিষ্যত গড়ে তুলছেন।
লুইস মাবুলো
সেলাইয়ের দোকানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা
ফোর্থ স্টেজে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তিন বছর নিবিড় চিকিৎসার ও ওষুধের জন্য অর্থ জোগাড়ে সংগ্রাম করা শাইরবু সাগিনবায়েভার শারিরীক অবস্থা এখন উন্নতির দিকে।
তাঁর মতো আরো ফোর্থ স্টেজের রোগীকে সাথে নিয়ে তিনি ফর লাইফ নামের একটি সেলাইয়ের দোকান খুলেন। সেখানে তারা অলঙ্কার ব্যবহার করে ব্যাগ তৈরি এবং বিক্রি করেন। এই দোকান থেকে যা আয় হয় তার পুরোটা তারা ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় দান করেন।
এখন পর্যন্ত তারা ৩৩ হাজার ডলারের বেশী সংগ্রহ করে ৩৪ জন নারীকে তাদের চিকিৎসায় সহায়তা প্রদান করেন।
এছাড়াও সাগিনবায়েভা হাসপাতাল থেকে দূরে থাকা রোগীদের সুবিধার্থে চিকিৎসাকেন্দ্রের কাছাকাছি একটি অলাভজনক হোস্টেল প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে রোগীরা থাকতে পারে।
লেখক
১৯৯০ সালে ব্যালাড অব লাভ ইন দ্য উইন্ড প্রকাশের মাধ্যমে মোজাম্বিকের প্রথম উপন্যাস প্রকাশকারী নারী হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করে পওলিন সিজিয়ানে।
মোজাম্বিকের রাজধানী মাপূটো শহরের প্রান্তে বেড়ে উঠতে উঠতে সিজিয়ানে একটি ক্যাথলিক বিদ্যালয়ে পর্তুগিজ ভাষা রপ্ত করেন। তিনি এদুয়ারদো মন্ডলেন ইউনিভার্সিটিতে ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করেন কিন্তু স্নাতক সম্পূর্ণ করেননি।
তার কাজ ইংরেজি, জার্মান এবং স্প্যানিশ সহ বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তার দ্য ফার্স্ট ওয়াইফ: আ টেল অব পলিগ্যামি বইটি দিয়ে তিনি স্থানীয় হোসে ক্রেভারিন্ইয়া পুরস্কার জিতে নেন।
অতি সম্প্রতি তিনি পর্তুগিজ ভাষার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সাহিত্য পুরষ্কার হিসেবে খ্যাত কামোয়েস পুরস্কার ও জিতে নিয়েছেন।
কবি
লেখক এবং রাজনৈতিক কর্মী দারিয়া সেরেঙ্কো যুদ্ধবিরোধী নারীবাদী সংগঠনগুলোর সমন্বয়কারীদের একজন। এটি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন।
গত নয় বছর ধরে তিনি রাশিয়ায় লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা নিয়ে লিখছেন। নারীবাদ ও যুদ্ধবিরোধী গদ্যের দুটি বইও লিখেছেন দারিয়া।
তিনি কোয়ায়েট পিকেট নামের একটি শিল্প উদ্যোগেরও প্রতিষ্ঠাতা। এই উদ্যোগের আওতায় তিনি নানা ধরণের বার্তা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড পরিধান করে মানুষকে সচেতন করেন।
রাশিয়া ইউক্রেনে পূরোদমে আগ্রাসন শুরু করার দুই সপ্তাহ আগে দারিয়াকে 'চরমপন্থী' বার্তা ছড়ানোর অভিযোগে আটক করা হয়। এরপর তিনি জর্জিয়ায় পালিয়ে যান, এরপর রাশিয়া তাকে 'বিদেশী চর' আখ্যা দেয়।
ফ্রিডাইভিং ইন্সট্রাক্টর
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা ফ্রিডাইভিং ইন্সট্রাক্টর জান্ডিল এন্ধলোউ সমুদ্রের ব্যবহারকে আরও বৈচিত্র্যময় করতে কাজ করছেন।
দ্য ব্ল্যাক মারমেইড ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তরুণ ও স্থানীয় জনগোষ্টীকে সমুদ্রকে বিনোদনমূলক, পেশাগত এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে আরো বেশী কাজে লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
এন্ধলোউ একজন সমুদ্র অনুসন্ধানকারী, গল্পকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি এই দক্ষতাগুলিকে কাজে লাগিয়ে একটি নতুন প্রজন্ম গঠনে সাহায্য করার চেষ্টা করেন, যারা সমুদ্রের দূষণ এবং সমুদ্রপৃষ্টের ক্রমবর্ধমান উচ্চতা বৃদ্ধি সম্পর্কে সচেতন হয়ে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করেন।
জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তরুণদের সচেতন হওয়া ও সমাজে পরিবর্তন আনতে তাদের জেগে ওঠা আমাকে আশাবাদী করে তোলে।
জান্ডিল এন্ধলোউ
অলিম্পিক অ্যাথলিট
যদিও তিনি মূলত হেপ্টাথলন অ্যাথলিট কিন্তু ১০০ মিটার হার্ডলসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই কামিলা পিরেলি টোকিও অলিম্পিকে জায়গা করে নিয়েছেন।
গুয়ারানি প্যান্থার নামে পরিচিত এই ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলেট বেশ কয়েকটি জাতীয় অ্যাথলেটিকস রেকর্ডধারী। একইসাথে তিনি একজন স্পোর্টস কোচ এবং ইংরেজি শিক্ষকও।
পিরেলি প্যারাগুয়ের একটি ছোট্ট শহরে পরিবেশ সচেতন এক পরিবারে বেড়ে ওঠেন, যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি নিজের চোখে দেখেছিলেন।
তিনি এখন তার স্পোর্টস প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে কথা বলতে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইকোঅ্যাথলেট চ্যাম্পিয়ন।
আমি এমন একটা শহরে বড় হয়েছি যেখানে বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়া দৈনন্দিন ঘটনা ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন সেই প্রাণীগুলো যে কষ্ট পাচ্ছে তা ভেবে আমার খুব খারাপ লাগে এবং আমি তাদের সাহায্য করতে চাই।
কামিলা পিরেলি
চিত্রনাট্যকার
পুরস্কার বিজয়ী লেখিকা, ইলাস্ট্রেটর এবং চিত্রনাট্যকার অ্যালিস ওসেমান তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের বেস্টসেলিং গ্রাফিক উপন্যাস হার্টস্টপার এর স্রষ্টা। নেটফ্লিক্সে প্রচারিত এলজিবিটিকিউ নিয়ে তার একটি গল্প এমি পুরস্কার জয় করে।
প্রতিটি পর্ব লেখা থেকে শুরু করে কাস্টিং থেকে সঙ্গীত পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে জড়িত ছিলেন ওসেমান ।
তিনি তরুণদের জন্য রেডিও সাইলেন্স, লাভলেস এবং সলিটেয়ারসহ বেশ কয়েকটি উপন্যাসের লেখক। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি সলিটেয়ার প্রকাশ করেন।
তার বইগুলি গুডরিড চয়েস অ্যাওয়ার্ডসহ একাধিক পুরষ্কার জিতেছে বা পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।
দৌড়বিদ
দেশের ১০০ মিটার দৌড়ের রেকর্ড ভাঙ্গার পর 'ইতিহাসের দ্রুততম লেবানিজ নারী' খ্যাতি পান আজিজা সাবেইতি। সম্প্রতি লেবাননের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ওয়েস্ট এশিয়ান এবং আরব চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জিতে আবারো তিনি খবরের শিরোনাম হয়েছেন।
লাইবেরিয়ান মা ও লেবানিজ বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া আজিজা ১১ বছর বয়সে লেবাননে চলে আসেন, যেখানে তাকে বর্ণবাদ এবং বর্ণভিত্তিক শ্রেণীবাদের মুখোমুখি হতে হয়।
খেলাধুলা তার নিজেকে খুজে পাওয়ার এবং ক্ষমতায়নের পথ হয়ে ওঠার পাশাপাশি তার অ্যাডভোকেসির ইচ্ছাকে আরো জোরদার করে।
দেশে পদ্ধতিগত বর্ণবাদ সম্পর্কে কথা বলতে, অন্তর্ভূক্তি ও সমতার প্রচার করতে তিনি তার অবস্থানকে কাজে লাগান। পাশাপাশি লেবাননের তরুণদেরকে অনুপ্রাণিত করতে বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সহযোগিতামুলক কর্মকান্ডে অংশ নেন।
অ্যাথলিট
ইউরোপীয় এবং কমনওয়েলথের ৪ x১০০মিটারে স্বর্ণজয়ী বিয়াঙ্কা উইলিয়ামস ২০২৩ সালের ইউরোপীয়ান টিম চ্যাম্পিয়ানশীপে গ্রেট ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ড টিমের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
জুলাই মাসে ইউকে অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০ মিটারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে তিনি বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ব্রিটিশ দলে তার স্থান নিশ্চিত করেন।
২০২০ সালের জুলাই মাসে লন্ডনে বিয়াঙ্কা এবং তার সঙ্গী ও সতীর্থ অ্যাথলিট রিকার্ডো ডস সান্তোসকে থামিয়ে তল্লাশী করে পুলিশ অফিসাররা।
পরে বিয়াঙ্কা ও তাঁর সঙ্গী ডস সান্তোস পুলিশের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ তুলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই অফিসারের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বরখাস্ত করা হয়।
অভিনেত্রী
প্রায় ২৫ বছর ধরে অভিনয় করা খিন হ্নিন ওয়াই সান ইয়ে চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি বার্মিজ সিনেমার অন্যতম সফল অভিনেত্রী।
তবে এখন তিনি তার দাতব্য কার্যক্রমের জন্য বেশি পরিচিত। ২০১৪ সালে তিনি নিজের নামে দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন - অনাথ এবং পরিত্যক্ত শিশুদের দেখভাল ও পরিচর্যা করার লক্ষ্য নিয়ে এই দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ফাউন্ডেশনটি বর্তমানে প্রায় ১০০ শিশুর দেখভাল করে যাদের বাবা-মা বিভিন্ন কারণে তাদের লালন-পালনে অসমর্থ।
তিনি শিশু পাচার প্রতিরোধ বিষয়ক দূত হিসেবেও কাজ করে থাকেন।
ক্রিকেটার
এবছর প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে উইজডেনের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রীড়াবিদের একজন নির্বাচিত হন হারমানপ্রীত কৌর।
ভারতের নারী জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক দেশে এবং বিদেশে সমান তালে রান করেন। গত বছর তিনি তার দলকে কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্য-পদক জয়ী করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
গত মার্চ মাসে তিনি প্রথম নারী প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে নেতৃত্ব দেন।
২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের হয়ে ১১৫ বলে ১৭১ রান করেন তার দলকে ফাইনালে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন হারমানপ্রীত।
কমেডিয়ান
গ্রীনওয়াশিং কমেডি ক্লাব হল একটি স্ট্যান্ড-আপ কমেডি দল যা পরিবেশগত সমস্যাগুলির পাশাপাশি নারীবাদ, দারিদ্র্য, প্রতিবন্ধিতা এবং এলজিবিটিকিউ অধিকার নিয়ে কাজ করে।
এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান অ্যান গ্রাল, যিনি বিশ্বাস করেন যে পঞ্চলাইনের মাধ্যমে মানুষের মনে পরিবর্তনের বীজ বপন করা এবং এমনকি তাদের অভ্যাসকেও প্রভাবিত করা সম্ভব।
গ্রাল বিশ্বাস করেন যে স্বল্পস্থায়ী ধারণা এবং ছোট বার্তা প্রাধান্য পাওয়া একটি বিনোদনমুখি সমাজে অত্যুক্তি এবং পঞ্চলাইনের উপর নির্ভরশীল হাস্যরস জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ধারণা শেয়ার করার জন্য একটি চমৎকার মাধ্যম হতে পারে।
গ্রিনওয়াশিং কমেডি ক্লাবের সাফল্য বেশ উৎসাহব্যঞ্জক, কারণ এটি ইঙ্গিত দেয় যে আজ অনেক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে উদ্বিগ্ন, এবং তারা একত্রিত হতে চায়, হাসতে চায় এবং তারা নিজেদেরকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ভেবেই শো' শেষে বাড়ি ফিরে যায়।
অ্যান গ্রাল
স্পীড ক্লাইম্বার
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় একবার দেসাক মাদে রীতা কুসুমা দেবীকে একটি প্রাচীর আরোহনের জন্য ডাকা হয়। সেই থেকেই তিনি স্পীড ক্লাইম্বিংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
ক্যারিয়ারের শুরুতেই বেশ কিছু সাফল্য এসে ধরা দেয় তার জীবনে। তবে এবছর যখন তিনি ক্লাইম্বিং এর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মহিলা স্পীড ইভেন্টে ছয় দশমিক ৪৯ সেকেন্ডে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জয় করেন, তখন "ইন্দোনেশিয়ান রক ক্লাইম্বিংয়ের রাণী" হিসেবে পরিচিত কুসুমা দেবী সত্যিকার অর্থে সাফল্যের চুড়ায় উঠেন।
এই সাফল্যের ফলে ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে জায়গা করে নেন তিনি। স্পীড ক্লাইম্বিং এবছরই প্রথমবারের মতো পৃথক ইভেন্ট হিসেবে অলিম্পিকে স্থান করে নিয়েছে।
এখন তার সামনে দেশের হয়ে অলিম্পিকে ইতিহাস গড়ার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ব্যাডমিন্টন, ভারোত্তোলন ও আার্চারিতে অলিম্পিক পদক জয় করেছে।
কিউরেটর ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাপক
একটি কমিক বই সম্মেলনে যোগদানের অভিজ্ঞতা সাও পাওলোর উপকণ্ঠে দরিদ্র এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কাছে নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে আন্দ্রেজা দেলগাদো পেরিফেকন নামের উদ্যোগ চালু করেন।
এই ইভেন্টের মাধ্যমে দেলগাদো ব্রাজিলের বস্তি এলাকার মানুষদের মধ্যে থাকা কমিক লেখক, শিল্পী ও অন্যান্যদের সামনে নিয়ে আসেন যাদেরকে সাধারণত সংস্কৃতির ভোক্তা বা স্রষ্টা হিসেবে তেমন স্বীকৃতি দেয়া হয় না।
২০২৩ সালে তৃতীয় পেরিফেকন অনুষ্ঠিত হয় যাতে কমিক বই, ভিডিওগেমস, কনসার্ট এবং অন্যান্য "গীক কালচার" এর প্রদর্শনী করা হয়। এই অনুষ্ঠানটিতে ১৫ হাজারের বেশী মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
নিজের ইউটিউব ও পডকাস্ট প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে দেলগাদো ব্রাজিলে সংস্কৃতির গণতন্ত্রায়নে জোর দেন। তিনি সাধারণত কৃ্ষ্ণাঙ্গ শিল্পীদের প্রতি বেশি নজর দেন।
ডিজে এবং সঙ্গীত প্রযোজক
গত বছর ইরানে নারী অধিকার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগে থেকেই ডিজে পারামিদা ইরানি বংশোদ্ভূত নারীদের সাংস্কৃতিক বিধিনিষেধের শৃঙ্খল ভাঙ্গার কাজ শুরু করেন।
এখন বার্লিনে বসবাসরত পারামিদা কিশোরী বয়সে ফ্রাঙ্কফুর্ট আর তেহরানে বসবাসের সময়ে সঙ্গীত ও নৃত্যে নিজের আগ্রহের বিষয়টি বুঝতে পারেন।
ড্যান্স মিউজিক জনরা দ্বারা অনুপ্রাণিত পারামিদার লাভ অন দ্য রকস রেকর্ড লেবেল ইউফোরিক ও আউটসাইডার ড্যান্স কালচারকে তুলে ধরে।
বার্লিনের প্যানোরামা বারের বাসিন্দা পারামিদা এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ডিজে এবং একজন দক্ষ সঙ্গীত প্রযোজক হয়ে উঠেছেন। পুরুষ-শাসিত সঙ্গীত এবং নাইটলাইফ শিল্পের প্রচলিত নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করতে নিজের অবস্থানকে কাজে লাগান পারামিদা।
অভিনেত্রী
আমেরিকা ফেরেরা বিনোদন জগতের সুপরিচিত এক মুখ, পুরস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী, পরিচালক এবং প্রযোজক। ফেরেরা বিভিন্ন আইকনিক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক সিনেমা বার্বি, রিয়েল উইমেন হ্যাভ কার্ভস এবং জনপ্রিয় সিরিজ আগলি বেটি।
আগলি বেটি সিরিজে তার ভূমিকার জন্য তিনি মূখ্য অভিনেত্রী বিভাগে সর্বকনিষ্ঠ এবং প্রথম ল্যাতিন ব্যক্তি হিসেবে এমি অ্যাওয়ার্ড জয় করেন। অনেকদিন ধরে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করা ফেরেরা নারীর অধিকার এবং পর্দায় নারীদের আরো বেশী উপস্থিতি বিষয়ে একজন প্রসিদ্ধ বক্তা।
হন্ডুরাসের অভিবাসীর মেয়ে ফেরেরা তার অলাভজনক সংস্থা পদেরিস্তার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাতিন নারীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
ফুটবলার
কাতালোনিয়ায় জন্ম নেয়া এই মিডফিল্ডার এ বছর তার ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে স্প্যানিশ লীগ ও চ্যাম্পিয়ান্স লীগ দুটোই জিতেছেন।
তবে আনিতা বিশ্বব্যাপী তারকাখ্যাতি পান বিশ্বকাপে তার পারফর্মেন্সের কারণে। স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অপরিহার্য সদস্য আনিতা তিনটি গোল করেন এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ২৫ বছর বয়সী আনিতা ব্যালন ডি'অর ও উয়েফার বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এবছর।
মাঠ ও মাঠের বাইরে সরব এই খেলোয়াড় ফুটবলে নারীদের সমান অধিকার নিয়ে কথা বলেন।
স্পেনের বিশ্বকাপ জয়ের ঘটনার চেয়েও বেশী আলোচিত হয়ে উঠে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ফুটবলার জেনি হেরমোসোর ঠোটে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট লুইজ রুবিয়ালেসের চুমু খাওয়ার ঘটনাটি। বনমাতি তার উয়েফা পুরষ্কার গ্রহণের সময় দেয়া বক্তৃতায় তার সতীর্থ খেলোয়াড় এবং একই রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়া অন্য নারীদের পক্ষে কথা বলেন।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী পারফর্মার
গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেখা হয় এমন ক্রীড়া ইভেন্টগুলির মধ্যে একটি সুপার বোল এ ইতিহাস সৃষ্টি করেন জাস্টিনা মাইলস।
শ্রবণ প্রতিবন্ধী জাস্টিনা মাইলস সুপার বোলের হাফটাইম শোতে মেগাস্টার রিহানার লিরিক্সের সাথে ইশারা ভাষায় দূর্দান্ত পারফর্ম করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
এর মাধ্যমে তিনি সুপার বোলের মর্যাদাপূর্ণ হাফটাইম শোতে আমেরিকান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ পারফর্ম করা প্রথম শ্রবণ প্রতিবন্ধী নারী হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন। তার আগে ইশারা ভাষার পারফর্মেন্স লিফ্ট এভরি ভয়েস অ্যান্ড সিং, যা ব্ল্যাক ন্যাশনাল অ্যান্থেম নামে পরিচিত, সেটিও প্রথমবারের মতো পারফর্ম করেন জাস্টিনা মাইলস।
মাইলস বিশ্বকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব দেখাতে চান এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের নার্সিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে চান।
অভিনেত্রী
ভারতীয় অভিনেত্রী দিয়া মির্জা শুধু তার অভিনয়ের জন্যই পুরষ্কার জেতেননি, তিনি পরিবেশ ও মানবিক অনেক কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন, বিশুদ্ধ বায়ু এবং জীববৈচিত্র সংরক্ষণ বিষয়ে নানা সচেতনতার বার্তা প্রচার করেন দিয়া মির্জা।
দিয়া মির্জা ওয়ান ইন্ডিয়া স্টোরিজ নামের একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্টাতা। এই সংগঠনটি মানুষের কাছে এমনসব গল্প হাজির করে, দিয়া মির্জার নিজের ভাষায় "যা মানুষকে ভাবতে শেখায়"।
তিনি সেভ দ্য চিলড্রেন, ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ারের দূত। এছাড়াও তিনি স্যাঙ্কচুয়ারী নেচার ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ সদস্য।
কেপপফরপ্ল্যানেট প্রতিষ্ঠাতা
কেপপফরপ্ল্যানেটের মাধ্যমে ডেয়ন লী সারা বিশ্বের কে-পপ ভক্তদের জলবায়ু সমস্যার মোকাবেলায় প্রস্তুত হওয়ার বার্তা দেন।
২০২১ সালে শুরু হওয়া এই প্রচারাভিযান গ্রুপটি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বিনোদন ও স্ট্রিমিং সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলবায়ু বিষয়ে কাজ করতে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে।
গ্রুপটি অ্যালবামের বর্জ্যের পরিবেশগত প্রভাব তুলে ধরে। ফলে কে-পপ তারকারা ডিজিটাল এলবামের দিকে ঝুঁকেছেন।
শুধু মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিই নয়, ডিয়ন লী এখন দামি ফ্যাশন ব্রান্ডগুলোর জলবায়ু সচেতনতা তৈরীতে কাজ শুরু করেছেন। এই কাজে অনেক সময় কে-পপ তারকাদের যুক্ত করেন তিনি।
যখন আমরা সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে দাড়াই, তখন একটি ইতিবাচক পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ি না। জলবায়ু সংকট নিয়ে কাজ করার সময় এটি আমরা অনেকবার প্রমাণ করেছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাবো।
ডেয়ন লী
পেশাদার অশ্বারোহী
বয়স ত্রিশের ঘরে থাকা অবস্থায় যখন এন্টিনিসকা সিনসি পেশাদার অশ্বারোহীর কাজ শুরু করেন, তখন তিনি ভাবেননি যে ১০ বছর পর তিনি ঘোড়ার পিঠে জিমনেস্টিক্স করা একটি দলের সদস্য হতে পারবেন।
ইতালির উত্তরাঞ্চলের লা ফেনিসের এই অশ্বারোহীর জীবন কখনো সহজ ছিলো না। তার মাকে বলা হয়েছিলো যে শারিরীক জটিলতা নিয়ে জন্ম নেয়া এন্টিনিসকা জীবনের প্রথম শীতকালই পার করতে পারবেন না।
এন্টিনিসকার অশ্বারোহী জীবন শুরু হয় ইতালির স্থানীয় প্রতিবন্ধিদের সংগঠন আনফাস এবং লা ফেনিস ভল্টিং টিমের সাথে।
এখন তিনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভল্টার আনা কাভায়েরো এবং প্রশিক্ষক নেলসন ভিদোনির সাথে ভল্টিং প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
টিভি ব্যক্তিত্ব
নিজের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের ছবি অনলাইনে ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর জর্জিয়া হ্যারিসন তার জীবনের এই দুর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ ও সম্মতির বিষয়ে যুক্তরাজ্যের মানুষের ধারণা বদলাতে কাজ শুরু করেন।
লাভ আইল্যান্ড এবং দ্য ওনলি ওয়ে ইজ এসেক্স শোতে অভিনয় করে খ্যাতি পাওয়া জর্জিয়া যুক্তরাজ্যের অনলাইন সেইফটি বিল সংশোধনের দাবিতে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। ঘনিষ্ঠ ছবি অপব্যবহার বা 'রিভেঞ্জ পর্ণ'কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং সহজে বিচারের ব্যবস্থার করা তার এই ক্যাম্পেইনের মূল লক্ষ্য।
হ্যারিসন এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিকে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন যে তারা যদি সম্মতি ছাড়া তোলা ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে তবে তাদের কঠোর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
নব্বইয়ের দশকে যুগোস্লাভিয়ায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নাতাসা কেন্ডিক দেশটিতে ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা ও গুমের শিকার মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করেন।
নাতাসা বেলগ্রেডের যুদ্ধপরাধ আদালতে নির্যাতনের শিকার বিভিন্ন পরিবারের হয়ে আইনি লড়াই করেছেন। কসোভো বিষয়ে সার্বিয়ার শাসক স্লাদোভান মিলোসেভিচের বিভিন্ন নীতির সমালোচকদের একটি দলেরও সদস্য ছিলেন তিনি।
নাতাসা হিউমেনিটারিয়ান ল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। সংগঠনটি যুদ্ধাপরাধের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য প্রশংসিত।
তিনি রেকম রিকনসিলিয়েশন নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন, এটি বলকান অঞ্চলে সংগঠিত বিভিন্ন যুদ্ধের সত্য ঘটনাবলী নিয়ে কাজ করে। বলকান অঞ্চলের বিভিন্ন যুদ্ধে আনুমানিক এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়।
প্রাক্তন রাজনীতিবিদ ও শান্তি আলোচক
এবছর উত্তর আয়ারল্যান্ড এর গুড ফ্রাইডে চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পূর্ণ হলো। যে বহুদলীয় শান্তি আলোচনা থেকে এই চুক্তির জন্ম, মনিকা ম্যাকউইলিয়ামস সেখানে প্রধান আলোচক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি সাম্প্রদায়িক বিভেদের উর্দ্ধে উঠা একটি রাজনৈতিক দল 'নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড উইমেন্স কোয়ালিশন' এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। শান্তি চুক্তিতে সমালোচনামুলক বিধান যুক্ত করতে দলটি অবদান রাখে।
তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রথম আইনসভায় নির্বাচিত হন। উত্তর আয়ারল্যান্ড হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রধান কমিশনার হিসেবে দেশটির জন্য একটি অধিকার বিলের পরামর্শের খসড়া তৈরী করেন।
ম্যাকউইলিয়ামস বর্তমানে একজন কমিশনার হিসেবে অস্ত্রধারী দল নিষিদ্ধে কাজ করছেন এবং নারীদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রচুর লেখালেখি করেছেন।
অগ্নিনির্বাপনকারী
অপেরা সঙ্গীত শিক্ষিকা সোফিয়া কসাচেভা ২০১০ সালে অগ্নিনির্বাপনকারী একটি দলের সংস্পর্শে আসার পর থেকে এই পেশায় আসার আগ্রহ বোধ করেন।
পরে তিনি নিজেকে একজন অগ্নিনির্বাপক হিসেবে গড়ে তুলেন এবং রাশিয়ায় দাবানল মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি দল গঠন করেন। তার এই কাজ সারা দেশে ২৫ টিরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরীতে সাহায্য করে।
তিনি রাশিয়া জুড়ে শতশত আগুন নির্বাপন করেন। রাশিয়ায় গ্রিনপিসকে আনুষ্ঠানিকভাবে "অবাঞ্ছিত" ঘোষনা এবং দেশটিতে এনজিওটির শাখা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটির সাথে কাজ করেন।
কসাচেভা স্বেচ্ছাসেবক বন অগ্নিনির্বাপকদের জন্য একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করেছেন যা রাশিয়ান ভাষায় দাবানল প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের তথ্য সম্বলিত সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ অনলাইন ডাটাবেস হিসাবে বিবেচিত হয়।
জলবায়ু সংকট যতই ব্যাপক হোক না কেন, প্রতিটি বড় অর্জনই ছোট থেকে শুরু হয়। বিশ্বব্যাপী পরিবর্তন করার জন্য আমাদের খুব ছোট মনে হতে পারে কিন্তু আমাদের নিজেদের চারপাশে যে পরিবর্তনগুলি করতে পারি তা দিয়েই শুরু করতে হবে।
সোফিয়া কসাচেভা
এফজিএম-বিরোধী প্রচারক
শামসা আরাওয়েলো তার শক্তিশালী অনলাইন ভিডিওগুলোর মাধ্যমে মানুষকে নারীর খৎনা বন্ধ করা ব্যাপারে সচেতনতা তৈরী করেন।
সোমালিয়াতে জন্ম নেয়া আরাওয়েলো বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বাস করেন। ছয় বছর বয়সে তিনি খৎনার শিকার হন। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে কোন চিকিৎসাগত কারণ ছাড়াই একজন নারীর যৌনাঙ্গ আংশিক বা সম্পূর্ণরুপে ফেলা দেওয়া হয়।
টিকটকে ৭০ লক্ষেরও বেশি ভিউ পাওয়া আরাওয়েলো এটি নিশ্চিত করতে চান যেন একজনও যেন এ বিষয়ে অজ্ঞ না থাকেন।
বর্তমানে তিনি বিদেশে আটকে পড়া ব্রিটিশ নাগরিক যারা তথাকথিত অনার-বেসড ভায়োলেন্সের (পরিবারের সম্মানহানির অজুহাতে যে নির্যাতন করা হয়) শিকার হচ্ছেন, তাদের সহায়তা করেন। পাশাপাশি তিনি লন্ডনের মেট্রোপলিটান পুলিশ-কে এফজিএম এর ব্যাপারে পরামর্শও দিয়ে থাকেন। গার্ডেন অব পিস নামের একটি দাতব্য সংস্থাও খুলেছেন তিনি।
মানবাধিকার কর্মী
ডেনিশ-বাহরাইন মানবাধিকার কর্মী মরিয়ম আল-খাওয়াজা বাহরাইন এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক সংস্কারের একটি নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর।
তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করেন। তার বাবা আব্দুলহাদি আল-খাওয়ার মুক্তির পক্ষে তিনি একটি ক্যাম্পেইন চালান। আব্দুলহাদি একজন বিখ্যাত অ্যাক্টিভিস্ট যিনি ২০১১ সালে বাহরাইনে সংগঠিত গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভে অংশ নেয়ার জন্য যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন।
আল-খাওয়াজা সিভিকাস এবং ইন্টারন্যঅশনাল সার্ভিস ফর হিউম্যান রাইটস এর মতো প্রতিষ্ঠানের বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আল-খাওয়াজা নারীবাদী সংস্থা ফ্রিডা এবং ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস এও কাজ করেন।
অ্যাটর্নি, লেখক ও ক্যাম্পেইনার
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা 'গার্লস অপর্চুনিটি এলায়েন্স'র প্রতিষ্টাতা। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন তৃণমূল সংস্থাকে সহযোগিতা করে মিশেল ওবামার সংস্থাটি।
এটি লেট গার্লস লার্ন শীর্ষক একটি উদ্যোগের উপর ভিত্তি করে নেয়া হয়েছিল। মিশেল ওবামা ফার্স্ট লেডি থাকাকালে বিশ্বব্যাপী মেয়েদের উন্নত শিক্ষা নিশ্চিতে মার্কিন সরকারের সাথে এই উদ্যোগটি নেয়া হয়।
ফার্স্ট লেডি হিসেবে আরো তিনটি বড় উদ্যোগ নেন মিশেল। সেগুলো হচ্ছে - লেটস মুভ! এটি সুস্থ সন্তান লালন-পালনে পিতামাতাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে কাজ করতো, জয়েনিং ফোর্সেস - এটি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান এবং সাবেক সেনা ও তাদের পরিবারকে সহায়তা করে, এবং রিচ হায়ার - তরুণদের উচ্চ শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার প্রতিষ্ঠান। শেষ প্রতিষ্ঠানটিতে এখনো কাজ করেন মিশেল।
আবাসন অধিকারকর্মী
নেপালের আদিবাসী নেওয়া সম্প্রদায়ের একজন সদস্য রুকশানা একজন ট্রান্সজেন্ডার মানবাধিকার কর্মী। রুকশানা তার বেড়ে উঠার সময় তখন তার নিজের পরিচয় সম্পর্কে তথ্যের অপ্রতুলতার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
রুকশানা লিঙ্গ ও যৌনতার বৈচিত্রের বিষয়ে জানতে স্ব-শিক্ষার পথ বেছে নেন। রুকশানা সামাজিক মাধ্যমে 'কুইয়্যার অধিকার' নিয়ে সোচ্চার হন।
রুকশানা এখন আইনের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং নেপালে এলজিবিটিকিউ মানুষের আইনি ও সাংবিধানিক অধিকারের অগ্রগতিতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখছেন।
রুকশানা নেওয়াদের মাঝে ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা জুগি বর্ণ থেকে উঠে এসেছেন। জুগিদেরকে তাদের আদি বাসস্থান থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়ছেন তিনি।
আদিবাসী অধিকারকর্মী
ইকুয়েডরের অ্যামাজন বনাঞ্চল রক্ষার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব আলিসিয়া কাহুইয়া এ বছর একটি বড় জয় পেয়েছেন।
আগস্টে একটি ঐতিহাসিক গণভোটে ইকুয়েডরের মানুষ ইয়াসুনী ন্যাশনাল পার্কে সমস্ত নতুন তেলকূপ বন্ধ করার পক্ষে রায় দেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জীববৈচিত্রপূর্ণ অঞ্চলগুলির একটি যেখানে বিচ্ছিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাস করে সেখানে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়।
ইয়াসুনীতে জন্ম নেয়া কাহুইয়া ওয়াওরানি জাতির (NAWE) নেতা। গণভোটের জন্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
তিনি বর্তমানে ইকুয়েডরের আদিবাসী জনগণের কনফেডারেশনের মহিলা বিভাগের প্রধান।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের জন্য সব কিছুই অনেক বদলে গেছে। এখন বন্যা এসে আমাদের ফসল নষ্ট করে দেয়। আবার সূর্য যখন খুব বেশি গরম হয় এবং খরা দেখা দেয়, তখন আমাদের খাবারের একটা বড় অংশই নষ্ট হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখের কথা, কারণ ফসলের জন্য আমরা যে পরিশ্রম করি, তার সবই বৃথা যায়।
আলিসিয়া কাহুইয়া
মানবাধিকার আইনজীবী
পুরষ্কার জয়ী মানবাধিকার আইনজীবী আমাল ক্লুনি গত দুই দশক ধরে ন্যায়বিচার বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
আর্মেনিয়া ও ইউক্রেনে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, মালাওয়ি এবং কেনিয়ায় নারীদের সাথে ঘটা যৌন সহিংসতার ঘটনার মতো বড় বড় মামলা লড়েছেন তিনি।
তার সাম্প্রতিক সাফল্যের মধ্যে রয়েছে আইএস জঙ্গি এবং দারফুরে নির্যাতনের শিকার নারীদের হয়ে মামলা পরিচালনা। এছাড়াও নিপীড়ক শাসকদের হাতে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন ক্লুনি।
তিনি কলম্বিয়া ল স্কুলে এডজাংক্ট প্রফেসর এবং ক্লুনি ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিসের সহ-প্রতিষ্টাতা। ফাউন্ডেশনটি বিশ্বের ৪০ টি দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘণের শিকার মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা
২০১১ সালে জাপানের ভয়াবহ ভুমিকম্প ও সুনামির পর ১১ বছর বয়সী রিনা গনোইকে উদ্ধার করেন জাপানের নারী সৈনিকরা। এরপর থেকেই রিনার স্বপ্ন ছিলো দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর হয়ে কাজ করার।
রিনার বাল্যকালের স্বপ্ন বাস্তব হলেও তিনি কর্মক্ষেত্রে ভয়ানক যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
২০২২ সালে গনোই মিলিটারীর চাকুরী ছেড়ে দিয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ক্যাম্পেইন শুরু করেন। একটি প্রবল পুরুষ–প্রধান সমাজে যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের জন্য প্রতিবাদ করার মত কঠিন কাজটি করেন গনোই।
তার এই অভিযোগের পর দেশটির সেনাবাহিনী এমন ঘটনার একটি অভ্যন্তরীন তদন্ত করতে বাধ্য হয়। এসময় সেনাবাহিনী ১০০ টির বেশি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পায়। পরে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় গনোই'র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
রাজনৈতিক কর্মী
২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে পূর্ব তিমুর। স্বাধীনতার আগে আগে ও পরে দেশটিকে বদলে দিতে নির্ভীক ভূমিকা পালন করেন রাজনৈতিক কর্মী বেল্লা গালহোস।
নির্বাসনে থাকার সময় বেল্লা তার দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সারা বিশ্বে কাজ করে গেছেন। দশকের পর দশক সংঘাতের ফলে দেশটির অর্ধেকের বেশী মানুষ চরম দারিদ্রের সাথে লড়াই করছিল। স্বাধীনতার পর পূর্ব তিমুরে ফিরে দেশ পুনর্গঠনে মনযোগ দেন বেল্লা।
২০১৫ সালে তিনি লেউব্লোরা গ্রিন স্কুল খোলেন, যেটা টেকসই উন্নয়ন এবং শিশুদেরকে পরিবর্তনের দূত হতে উদ্বুদ্ধ করে।
গালোস বর্তমানে তাঁর দেশের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও এলজিবিটিকিউ অধিকারের এক সুপরিচিত কন্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন বেল্লা।
মন্ত্রী
ব্রাজিলের ক্রমবিকাশমান আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব সোনিয়া গুয়াজাজারা ২০২৩ সালে তার দেশের প্রথম আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী হন। তার এই পদে আসীন হওয়াকে প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার এক ঐতিহাসিক নিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
পরিবেশগত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইকে তিনি তার শীর্ষ অগ্রাধিকারের মধ্যে একটি করার অঙ্গীকার করেছেন।
গুয়াজাজারা আমাজন অঞ্চলের আরারিবোয়ায় নিরক্ষর পিতামাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে একটি ইকোসিস্টেমকে ধ্বংস করতে পারে তা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান।
তিনি সাহিত্য অধ্যয়ন, নার্স এবং শিক্ষক হিসাবে কাজ করতে এবং অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করতে ঘরের বাইরে আসেন। ২০২২ সালে তিনি সাও পাওলো রাজ্যের প্রথম আদিবাসী কংগ্রেসওম্যান হন।
আমাদের জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রচার এবং পরিবেশগত বর্ণবাদবিরোধী লড়াই করতে হবে কারণ পরিবেশকে যারা সবচেয়ে ভালভাবে রক্ষা করতে পারে তারাই এর ধ্বংসের প্রথম শিকার এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াদের অন্যতম। আমরা, আদিবাসীরা, জীববৈচিত্র এবং জীবনের প্রকৃত রক্ষক।
সোনিয়া গুয়াজাজারা
ডিম্বাণু সংরক্ষণ অধিকার কর্মী
২০১৮ সালে জু জাওজাও বেইজিংয়ের একটি সরকারি হাসপাতালে তার নিজের ডিম্বাণু সংরক্ষণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অবিবাহিত জাওজাওকে জানানো হয় দেশটিতে এই সুযোগ শুধুমাত্র বিবাহিতরাই পান।
এই ঘটনার পর তিনি হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। এভাবেই তিনি প্রথমবারের মতো চীনের অবিবাহিত নারীদের ডিম্বাণু সংরক্ষণ নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার উদাহরণ সৃষ্টি করেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া তার এই আইনি লড়াই কম জন্মহারের দেশ চীনে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত করে।
এই মামলার রায় এখনো হয়নি, তবে এরই মধ্যে মামলাটি আইন, চিকিৎসা ও নীতি শাস্ত্র অধ্যয়নের বিষয় হয়ে উঠেছে। এখন তিনি অবিবাহিত নারীদের প্রজনন অধিকার ও শারীরিক স্বাধীনতার মুখপাত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
আইনসভা সদস্য
১৮৮৫ সালে বিশপ অকল্যান্ড নির্বাচনী আসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালে সেই আসন থেকে প্রথমবারের মত কনজারভেটিভ পার্টির এমপি নির্বাচিত হন ডেহেনা ডেভিসন । ২০২২ সালে তিনি লেভেলিং আপ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এবং সামাজিক গতিশীলতা ও পুনর্জাগরনের প্রতি মনোনিবেশ করেন।
এবং ২০২৩-এ তার ক্রনিক মাইগ্রেন ধরা পড়ার কথা খোলাখুলি জানিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।
ডেভিসনের বয়স যখন মাত্র ১৩ তখন একটি ঘুষির শিকার হয়ে তার বাবা খুন হন। আর এই ঘটনা তার রাজনৈতিক যাত্রার অনুঘটক হয়ে ওঠে। তিনি 'অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন ওয়ান পাঞ্চ এসল্টস' প্রতিষ্ঠা করেন এবং 'ওয়ান পাঞ্চ ইউকে' এর সাথে এই বিষয়ে ন্যায়বিচার ও শাস্তির সংস্কারের জন্য প্রচারণা চালান।
এছাড়াও তিনি ক্রনিক মাইগ্রেনের চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নতিতে এবং ইনভাসিভ লোব্যুলার ক্যান্সার (এক ধরণের স্তন ক্যান্সার) এর জন্য আরও গবেষণা তহবিল জোগাড়ের প্রচারণায় মনোনিবেশ করেন।
বাল্যবিয়ে বিরোধী কর্মী
উলান্ডার বেড়ে ওঠা মালাওয়ির লিলোঙ্গউয়ি নামের এক গোত্রে, যেখানে নারীদের শিক্ষার সুযোগ অত্যন্ত অপ্রতুল। সেখানকার অনেক মেয়েকেই বিয়ের জন্য বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই স্কুল থেকে ঝরে পড়তে হয়।
উলান্ডা তার সম্প্রদায়ের এই অচলাবস্থা ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।
তিনি বাল্যবিয়ে রোধে প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং সেই সাথে অকাল গর্ভধারণের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে কাজ করে থাকেন।
তিনি বর্তমানে এইজ আফ্রিকা নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালাওয়ির কান্ট্রি ডিরেক্টর পদে কর্মরত আছেন। সংস্থাটি মাধ্যমিক পর্যায়ে আফ্রিকা মহাদেশের মেয়েদের সমান সুযোগ নিশ্চিতে কাজ করে।
উদ্বাস্তু অধিকার কর্মী
দোস্তি নেটওয়ার্ক এমন একটি সংগঠন যেটা আফগানিস্তানে এবং এর বাইরে উদ্বাস্তু হিসেবে বসবাসকারী আফগানদের জরুরী সেবা ও তথ্য সরবরাহ করার কাজে নিয়োজিত। ২০২১ সালে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পরিপ্রেক্ষিতে এটি গঠিত হয়।
নিজে একজন আফগান উদ্বাস্তু হিসেবে এই নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা সুমাইয়া তোরা বাস্তুচ্যুত ব্যাক্তিদের সমস্যাগুলোকে ভালোভাবেই বোঝেন।
উদ্বাস্তু পুনর্বাসন এবং সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়াই তার কাজের লক্ষ্য।
শিক্ষার শক্তির প্রতি আস্থাশীল তোরা জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, দ্যা মালালা ফাউন্ডেশন এবং শ্মিট ফিউচারস এর মত সংগঠনের সাথে কাজ করেছেন। এইসব অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে তিনি জরুরী পরিস্থিতিতে উদ্বাস্ত, নারী এবং মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে কাজ করেন।
প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী
হিরো উইমেন রাইজিং বা মামা সুজা নামক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কঙ্গোর নারী ও কিশোরীদের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন নিমা।
প্রতিবন্ধী অধিকার কর্মী নিমা তৃণমূলে সংগঠনটি তৈরীর কাজ করেন যেটি শিক্ষা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের কন্ঠস্বর তুলে ধরে এবং তাদের অধিকারের বিষয়ে আওয়াজ তোলার শিক্ষা দেয়।
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের এক দূর্গম এলাকায় জন্ম নেয়া নিমা মাত্র দুই বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়েছিলেন। নিজের জাতিগোষ্ঠীর প্রথম নারী হিসেবে প্রতিবন্ধীতা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পাশ করেন।
তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং দেশের জেন্ডার ও পরিবার বিষয়ক মন্ত্রীর উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন।
কূটনীতিক এবং জলবায়ু নীতি আলোচক
২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের আলোচনা যখন স্থগিত হয়ে যায় তখন একটি সমস্যা সমাধানের জন্য ডাক পড়ে ক্রিশ্চিয়ানা ফিগারেসের।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের নির্বাহী সেক্রেটারি ফিগারেস পরবর্তী ছয় বছর একটি সম্মিলিত জলবায়ু কৌশলের বিষয়ে সদস্য দেশগুলিকে সম্মত করার প্রচেষ্টায় কাজ করেন।
২০১৫ সালে্ প্রায় ২০০ টি দেশ যে ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে সেটির পিছনে ফিগারেসের অবদান অনস্বীকার্য। এই আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন প্রাক-শিল্প স্তরের তুলনায় ২° সেলসিয়াস এর নিচে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ফিগারেস গ্লোবাল অপটিমিজমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সংগঠনটি জলবায়ু সমস্যার বাস্তবভিত্তিক সমাধান গ্রহনে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করে।
মাঝেমধ্যে আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে কাজ করতে অক্ষম হয়ে পড়ি, আমার আবেগ আমাকে থমকে দেয়। আবার কখনো কখনো আমি রাগান্বিত হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাতে উদ্যত হই। কিন্তু ভালো সময়গুলিতে আমার দুঃখ ও আবেগগুলিকে আমি আমার শক্তিতে পরিণত করি। আমি তখন অন্যদের সাথে মিলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যাওয়ার জন্য কাজ করার স্পৃহা অনুভব করি।
ক্রিশ্চিয়ানা ফিগারেস
পলিটিকসফরহার এর প্রতিষ্ঠাতা
ইয়াসমিনা বেনস্লিমানে লিঙ্গ সমতা অগ্রগতির লক্ষ্য নিয়ে পলিটিকসফরহার প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটি রাজনৈতিক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারী ও মেয়েদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে।
সেপ্টেম্বরে যখন তার নিজ দেশ মরক্কোতে একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্প আঘাত হানে, তখন বেনস্লিমানে এবং তার সংগঠন লিঙ্গ-সংবেদনশীল ত্রাণ সাহায্যের জন্য কাজ করেন।
একটি ইশতেহার প্রকাশ করে তিনি দেখান যে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে নারীদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ আরো বেড়ে যাবে, যেমন জোরপূর্বক বিবাহ ও পিরিয়ডকালীন সময়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সামগ্রীর অপ্রতুলতা।
বেশ কয়েকটি অলাভজনক সংস্থার পরামর্শদাতা, উপদেষ্টা এবং বোর্ড সদস্য হিসাবে তিনি তরুণীদের নেতৃত্বের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করেন। তার কাজের জন্য জাতিসংঘের উইমেন পিস বিল্ডার পুরষ্কার প্রদান করে।
আইনজীবী
ইয়ায়েল ব্রাউদো-বাহাত তার আইন পেশার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ইসরায়লে উইমেন ওয়েজ পিস ডব্লিউডব্লিউপি নামের একটি তৃণমূল শান্তি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ডব্লিউডব্লিউপির একজন সহ-পরিচালক যেটির এখন ৫০ হাজারের বেশি সদস্য রয়েছে।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ডব্লিউডব্লিউপি আলোচনার মাধ্যমে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমস্যার সমাধান চায়। আর সংগঠনটি এই শান্তি প্রক্রিয়ায় নারীদের ভূমিকার উপর জোর দিয়ে থাকে।
ডব্লিউডব্লিউপি গত দুই বছর ধরে উইমেন অব দ্য সান নামের ফিলিস্তিনি নারীদের একটি সংগঠনের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে।
ব্রাউদো-বাহাত জানান তার কাজের জন্য তিনি তার মায়ের কাছে ঋণী। ব্রাউদো-বাহাতের মা ভিভিয়ান সিলভার একজন বিশিষ্ট পিস অ্যাক্টিভিস্ট ও ডব্লিউডব্লিউপি এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা যিনি কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত হন সিলভার।
সাংবাদিক
মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকেই জর্জিয়ার গণমাধ্যমে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তামার মুসেরিদজ। তামুনা নামেও পরিচিত এই সাংবাদিকের জীবনে বদলে যায় ৩১ বছর বয়সে এসে, যখন তিনি জানতে পারেন তিনি আসলে পালিত কন্যা।
এরপর তিনি সব ছেড়ে তার আসল মা-বাবার খোঁজ শুরু করেন। গবেষণার এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন যে সেই '৫০এর দশক থেকেই জর্জিয়াতে অবৈধভাবে দত্তক নেয়ার রমরমা ব্যবসা চলছে।
এরপর তিনি আই অ্যাম সার্চিং নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন, যা অবৈধ দত্তক নেয়ার বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী তুমুল আলোচনার সূত্রপাত করে। অবৈধ দত্তক দেয়া ওই শিশুদের বেশিরভাগকে প্রসূতি হাসপাতাল থেকে নেয়া হয়েছিল।
মুসেরিদজের সংগঠন শত শত পরিবারকে হারানো সন্তানকে খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। তবে মুসেরিদজ আজো খুঁজে ফিরছেন তার নিজের মা-বাবাকে।
পশ্চিম সাহারা
আলমাসার লাইব্রেরি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা নাজলা মোহাম্মদ-লামিন দক্ষিণ-পশ্চিম আলজেরিয়ার সাহারাউই শরণার্থী শিবিরগুলিতে নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশ সম্পর্কে শিক্ষিত করতে চান।
তিনি মূলত ১৯৭৫ সাল থেকে মরক্কোর দখলে থাকা একটি প্রাক্তন স্প্যানিশ উপনিবেশ পশ্চিম সাহারা থেকে এসেছেন যেখান থেকে তার পরিবার সহিংসতা থেকে বাঁচতে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
শরনার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করা এবং বেড়ে ওঠা মোহাম্মদ-লামিন কিশোরী বয়সে ইংরেজি শিখেছিলেন, যা তাকে বিদেশী প্রতিনিধিদের সাথে অনুবাদক হিসেবে কাজ করতে সাহায্য করে। টিউশন ফি ক্রাউডফান্ড করে তিনি বিদেশে পড়াশোনা করতে সক্ষম হন।
সাস্টেইনেবল ডেভেলপম্যান্ট ও উইমেন্স স্টাডিজে স্নাতক পাশ করার পরে তিনি দুই লাখের বেশী সাহারাউই শরণার্থীকে জল এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করার জন্য শরণার্থী শিবিরে ফিরে আসেন। কারন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ওই এলাকায় জল ও খাদ্য নিরাপত্তার পরিস্থিতি আরো খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছিল।
আমাদের মরুভূমি এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলা করতে হবে। এখানে আমাদের ঘরবাড়ি নিয়মিত বন্যা ও বালুঝড়ে ধ্বংস হয় এবং আমাদের মানুষ অতিরিক্ত উষ্ণতার কারনে ভোগান্তির শিকার হয়। অথচ এই মানুষগুলো জলবায়ু সংকট তৈরিতে কোনো দায় নেই বললে চলে।
নাজলা মোহাম্মদ-লামিন
লেখক ও শিল্পী
সেপিদেহ রাশনু ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধানের নিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দেশটিতে পরিচিতি লাভ করেন।
বাসে এক সহযাত্রী মহিলা তাকে মাথা ঢেকে রাখার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এর ওই মহিলার সাথে ঝগড়া করলে রাশনুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
হেফাজতে থাকাকালীন সময় তিনি ক্ষতবিক্ষত মুখ নিয়ে রাষ্ট্রীয় টিভিতে উপস্থিত হয়ে তার আচরণের জন্য 'ক্ষমা চেয়েছিলেন'। ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাসা আমিনির মৃত্যুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ২০২২ সালের জুলাই মাসে রাশনুর সাথে এই ঘটনা ঘটে।
এই বছরের শুরুর দিকে হেডস্কার্ফ ছাড়া নিজের ছবি অনলাইনে শেয়ার করার পরে রাশনুকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি জানান অ্যাক্টিভিজমের জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়।
তিনি বর্তমানে কারাগারের বাইরে রয়েছেন এবং বাধ্যতামূলক হিজাবের নিয়ম অমান্য করে চলেছেন।
জলবায়ুনীতি উপদেষ্টা
জলবায়ু নীতির একজন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ ইরিনা স্টাবচুক সম্প্রতি ইউরোপীয় জলবায়ু ফাউন্ডেশনের ইউক্রেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছেন, যার প্রধান লক্ষ্য হল তার দেশের যুদ্ধোত্তর সংস্কারের জন্য সবুজ এবং জলবায়ু-উপযোগী সমাধান প্রস্তুত করা।
এই দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ইউক্রেন সরকারের উপ-পরিবেশমন্ত্রী হিসাবে কাজ করেছেন এবং দেশটির জলবায়ু পরিবর্তন নীতি, ইউরোপীয় ইন্টিগ্রেশন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য কাজ করেছেন।
স্টাবচুক দুটি উল্লেখযোগ্য পরিবেশবাদী বেসরকারি সংস্থা - ইকোঅ্যাকশন এবং কিয়েভ সাইক্লস্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কাজ করা নাগরিক সমাজের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক সমন্বয়কারী।
আমরা যে জায়গা ও পরিস্থিতির মধ্যে আছি তার মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ দেয়াটাই আমাদের কাজ। আমি সেইন্ট ফ্রান্সি অব অসিসির এই কথা মেনে চলি, "যেটা প্রয়োজনীয় সেটা দিয়ে শুরু কর; তারপর যা সম্ভব তা কর। এরপরই দেখবে তুমি অসম্ভবকে সম্ভব করছো"।
ইরিনা স্টাবচুক
প্রখ্যাত নারীবাদী
১৯৭০ দশক থেকে বৈশ্বিক নারীবাদী আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত নাম গ্লোরিয়া স্টেইনহেম।
স্টেইনহেম একজন অ্যাক্টিভিস্ট, সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক ও গণমাধ্যম মূখপাত্র হিসেবে নারীর সমতা নিয়ে কাজ করেছেন।
স্টেইনহেম ১৯৭১ সাল থেকে প্রকাশিত মিস ম্যাগাজিনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। নারী অধিকার আন্দোলনকে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় নিয়ে আসা প্রথম সাময়িকী হিসেবে এটি পরিচিত।
৮৯ বছর বয়সী স্টেইনহেম এখনো উইমেন্স মিডিয়া সেন্টার, দ্য ইআরএ কোয়ালিশন এবং ইক্যুয়ালিটি নাও নামে সুপরিচিত সংগঠনকে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি ন্যায্য পৃথিবীর জন্য লড়াই অব্যাহত রেখেছেন।
নিখোঁজ পরিবারের অধিকারকর্মী
২০০৮ সালে তার বোনের নিখোঁজ হওয়ার পর বার্নাডেট স্মিথ তার হারিয়ে যাওয়ার কারন খুঁজতে থাকেন।
তিনি কানাডা জুড়ে নিখোঁজ এবং নিহত আদিবাসী নারী ও মেয়েদের পরিবারের জন্য কাজ করা একজন প্রধানতম ব্যক্তি হয়ে ওঠেন এবং তাদের সহযোগিতার জন্য একটি জোট গঠন করেন।
বার্নাডেট উইনিপেগের রেড রিভারে নিখোঁজ ব্যক্তিদের দেহ বা প্রমাণ খুঁজে পাওয়ার উদ্যোগ ড্র্যাগ দ্য রেড এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
স্মিথ সম্প্রতি ম্যানিটোবা বিধানসভায় তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন এবং প্রদেশের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়া প্রথম দুই জন আদিবাসী নারীর মধ্যে একজন হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তিনি বর্তমানে গৃহায়ন, মাদকাসক্তি ও গৃহহীন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আবাসন অধিকারকর্মী
মিয়ামির লিটল হাইতি এলাকার বাসিন্দা রেনিটা হোমস 'আওয়ার হোমস' নামে একটি আবাসন বিষয়ক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ফ্লোরিডা ভিত্তিক এ সংস্থা ব্যবসা ও সম্পত্তি সংক্রান্ত পরামর্শক হিসেবে কাজ করে।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আবাসনের অধিকার নিয়ে কাজ করেন রেনিটা হোমস। সমুদ্র উপকূলের থেকে দূরবর্তী যেসব এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সম্পত্তির দাম বেড়ে গেছে, সেসব এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করেন তিনি।
১১ ভাইবোনের সংসারে বড় হওয়া হোমসের মা ছিলেন একজন 'সিঙ্গেল মাদার', যিনি নানা প্রতিবন্ধিতার সাথে লড়াই করে বেঁচে আছেন।
রেনিটা ক্লিও ইনস্টিটিউটের এমপাওয়ারিং রেজিলিয়েন্ট উইমেন প্রকল্পের ফেলো। প্রকল্পটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে জলবায়ু সংক্রান্ত প্রচারণা চালায়। স্থানীয় আবাসন সংস্থাগুলোর আফ্রো-আমেরিকান ও শহুরে নারীদের সমস্যায় সাহায্য় করেন রেনিটা।
নারীদের সাথে জগৎ মাতার (মাদার আর্থ) যে তুলনা হয়, সেটি আমাদের আশাবাদী করে তুলে। আমরা প্রাণবন্ত, শক্তিশালী, যত্নশীল এবং কর্মঠ।
রেনিটা হোমস
পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা
সামাজিক ও পরিবেশগত পরিবর্তন নিয়ে ২০ বছরের বেশি সময় কাজ করে যাওয়া ওয়ানজিরা মাথাই পুরো আফ্রিকা মহাদেশে তার অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বের জন্য বিখ্যাত।
তিনি কেনিয়ার আদিবাসীদের সংগঠন গ্রীন বেল্ট মুভমেন্টের নেতৃত্ব দেন যা বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন করে। সংগঠনটি ওয়ানজিরার মা ২০০৪ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কার জয়ী ওয়ানগারি মাথাই প্রতিষ্ঠা করেন।
মাথাই এখন আফ্রিকা এন্ড গ্লোবাল পার্টনারশিপস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ওয়ানগারি মাথাই ফাউন্ডেশনের প্রধান।
তিনি বর্তমানে বেজোস আর্থ ফান্ড, ক্লিন কুকিং অ্যালায়েন্স এবং ইউরোপিয়ান ক্লাইমেট ফাউন্ডেশন আফ্রিকার উপদেষ্টা।
বৃক্ষরোপন-ভিত্তিক উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় নেতৃত্বে পুনরুদ্ধার প্রকল্প, নয়াবনযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার এবং বৃত্তাকার অর্থনীতির মতো স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে আমাদের সহায়তা করে যেতে হবে। তৃণমুল থেকে নেয়া এই ধরনের প্রচেষ্টা আমাকে আশাবাদী করে কারণ এগুলো আমাদেরকে ধারণা দেয় যে কী করা সম্ভব।
ওয়ানজিরা মাথাই
শিশু অধিকার কর্মী
ইউক্রেনের শিশুরা যাতে যুদ্ধের ট্রমা কাটাতে পারে সেটি নিয়ে কাজ করেন ওলেনা রোজভাদোভস্কা। তিনি ভয়েস অব চিল্ড্রেন নামের একটি দাতব্য সংস্থার সহ–প্রতিষ্ঠাতা। দাতব্য সংস্থাটি শিশুদের মানসিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
দাতব্য সংস্থাটি ২০১৯ সালে তৃণমূলের একটি উদ্যোগ হিসেবে শুরু করেন রোজভাদোভস্কা। দনবাসে রুশ– সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে ইউক্রেনের যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার চার বছর পর এই দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এখন সংস্থাটির ১৪ টি শাখায় ১০০ জনের বেশি মনোবিদ কাজ করছেন। তাদের একটি ফ্রি হটলাইনও রয়েছে। সংস্থাটি হাজারো শিশু ও তাদের অভিভাবকদের সহায়তা প্রদান করেছে।
রোজভাদোভস্কা অস্কারের জন্য মনোনীত ডকুমেন্টারি আ হাউজ মেড অব স্প্লিন্টার্স এ অংশ নিয়েছেন। সেই সাথে তার সহকর্মীদের নিয়ে ওয়ার থ্রু দ্য ভয়েস অব চিল্ড্রেন নামে একটি বইও প্রকাশ করেন তিনি।
পার্টিকেল পদার্থবিদ
পার্টিকেল পদার্থবিদ্যার একজন গবেষক অধ্যাপক আনামারিয়া ফন্ট ভিলারোয়েল সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন। এটি প্রকৃতির সকল কণা এবং মৌলিক শক্তিকে ক্ষুদ্র, কম্পমান সুতা হিসেবে চিন্তা করে তাদের ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করে।
পদার্থ এবং কোয়ান্টাম মধ্যাকর্ষণের গঠনের ক্ষেত্রে ফন্টের গবেষণা এই তত্ত্বের পরিণতি সম্পর্কে গভীর ধারণা দিয়েছে, যা ব্লাক হোল এবং বিগ ব্যাং পরবর্তী প্রথম মুহুর্তগুলোর বিবরণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক।
এর আগে তিনি ভেনিজুয়েলাতে ফাউন্ডেশন পোলার পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং এবছর তিনি ইউনেস্কোর উইমেন ইন সায়েন্স পুরস্কারের একজন বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সামাজিক মনোবিদ
প্রায় দুই দশক আগে যখন সামাজিক মনোবিজ্ঞানী ফ্যাবিওলা ট্রেজো তার একাডেমিক যাত্রা শুরু করেন, তখন মেক্সিকোতে সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয় হিসাবে নারীর যৌন সুখের উপর কোন গবেষণা ছিল না।
ট্রেজো সামাজিক বৈষম্য, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এবং যৌন সুখের রাজনৈতিক শক্তি তার কাজের মাধ্যমে তুলে ধরেন এবং নারীর জন্য যৌন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেন।
তিনি বলেন যে কিছু বৈষম্য নারীকে যৌন দৃষ্টিকোন থেকে আরও দুর্বল করে তোলে। বক্তৃতা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং ব্যবহারিক কর্মশালার মাধ্যমে তিনি এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে ওঠার জন্য যৌনসুখ, অরগাজম এবং হস্তমৈথুনের ব্যাপারে আলোকপাত করতে সাহায্য করেন।
তার কাজের কেন্দ্র ল্যাটিন আমেরিকা এবং স্প্যানিশ-ভাষী সম্প্রদায়গুলিতে, যেখানে নারী স্বাস্থ্য এবং যৌনতা সম্পর্কিত বিষয়গুলি এখনও ট্যাবু।
স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মী
২০১৭ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ তীব্রতর হওয়ার পর আমিনা আল-বিশ প্রথম নারী স্বেচ্ছাসেবীদের একজন হিসেবে সিরিয়া সিভিল ডিফেন্সের সদস্য হন। 'হোয়াইট হেলমেট' নামে পরিচিত এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লক্ষ্য বেসামরিক লোকদের জীবন বাঁচানো এবং তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়া ও তুরস্কে আঘাত হানা ভূমিকম্পে আটকে পড়াদের উদ্ধারের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন আমিনা। এই ভূমিকম্প আমিনার আশেপাশের এলাকাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। তার নিজের পরিবারের সদস্যদেরাও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন।
আল-বিশ এখন উত্তর সিরিয়ায় তার সম্প্রদায়ের অন্যান্য নারীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন, যেখানে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। তিনি ব্যবসায় প্রশাসনে পড়াশোনা করছেন। আমিনার জানান যে তার স্বপ্ন হল একটি শান্তিপূর্ণ সিরিয়া গড়ার কাজে অংশ নেওয়া।
প্রিম্যাচিওর মেনোপজ বিষয়ক কর্মী
ইসাবেল ফারিয়াস মায়ার কখনও চিন্তা করেন নি যে তার অনিয়মিত মাসিক চক্র সন্দেহজনক কিছুর লক্ষণ হতে পারে। কিন্তু ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার ঠিক আগে তার অকালীন মেনোপজ বা প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ইনসাফিশিয়েন্সি ধরা পড়ে। এই সমস্যাটা তখনই দেখা দেয় যখন ওভারীস বা ডিম্বাশয় সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ৪০ বছরের কম বয়স্ক শতকরা প্রায় ১ শতাংশ নারী এতে আক্রান্ত হন।
এতে নারীরা মেনোপজ এর মতই উপসর্গ লক্ষ্য করেন, কিন্তু সেটা অনেক কম বয়সে। অস্টিওপোরোসিস নিয়ে বেচে থাকা সহ, এই স্বাস্থ্য পরিস্থিতি কিভাবে তার জীবনের উপর প্রভাব ফেলে সেবিষয়ে ফারিয়াস খোলাখুলিভাবেই কথা বলেছেন।
তথ্য আদান-প্রদান, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা তৈরীর উদ্দেশ্যে এই ৩০ বছর বয়স্ক এই সাংবাদিক ল্যাতিন আমেরিকাতে প্রিম্যাচিওর মেনোপজ বিষয়ক প্রথম আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক চালু করেছেন।
সার্জন
গাজার প্রথম নারী সার্জন সারা আল-সাক্কা। তিনি গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফাতে কাজ করেন।
নিজের ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট ব্যবহার করে যুদ্ধকালীন সময়ে মানুষের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছেন সারা। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমনে আল-শিফা হাসপাতালটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
হাসপাতালটিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানী, পানি ও খাবারের অপ্রতুলতার কারনে রোগীদের সেবা দিতে বাধার সম্মুখীন হওয়ার বিষয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে যাচ্ছেন আল-সাক্কা। ইসরায়েলী সেনারা অভিযান চালানোর আগ মুহুর্তে হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হন আল-সাক্কা। হামাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযান চালাতেই ওই হাসপাতালে অভিযান চালানো হয় বলে জানায় ইসরায়েলী প্রতিরক্ষা বাহিনী।
আল-সাক্কা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব গাজায় চিকিৎসা শাস্ত্রে এবং লন্ডনের কুইন মেরী বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্জারি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এখন তিনিই গাজার একমাত্র নারী সার্জন নয়, তার দেখানো পথে আরও নারীরা এই পেশায় এসেছেন।
জলবায়ু এবং প্রতিবন্ধী উপদেষ্টা
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানবাধিকার আইনজীবী এলহাম ইউসুফিয়ান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, বিশেষ করে জলবায়ু দুর্যোগে জরুরি প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির একজন উৎসাহী প্রবক্তা।
ইরানে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা ইউসুফিয়ান ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নেন। তিনি এখন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিত্বকারী ১,১০০টিরও বেশি সংগঠনের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল ডিজ্যাবিলিটি অ্যালায়েন্স'র একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে ডিসিশন মেকারদের শিক্ষিত করা তার লক্ষ্য। তিনি জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অসীম সম্ভাবনার বিষয়েও কাজ করেন।
আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা জটিল এমনকি অসমাধানযোগ্য সমস্যার সমাধান খুঁজে পেতে আমাদের দক্ষতা বারবার প্রমাণ করেছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামনের সারিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দাঁড়াতে পারেন এবং তাদেরকে দাঁড়াতেও হবে।
এলহাম ইউসুফিয়ান
স্টোরিটেলার
পরিবেশবিদ ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কুইয়ুন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা তৈরীতে কাজ করেন।
অনলাইন প্লাটফর্ম দ্য উইয়ার্ড অ্যান্ড দ্য ওয়াইল্ড ব্যবহার করে তিনি জলবায়ু বিজ্ঞানকে আরো সহজবোধ্য করে তোলার কাজ করেন। তার তৈরি কন্টেন্ট জলবায়ু বিষয়ে ধারণা প্রদান, শিক্ষাদান ও মানুষের যোগাযোগ স্থাপনে ভূমিকা রাখে।
কুইয়ুন ক্লাইমেট চিজকেক নামের একটি পরিবেশ বিষয়ক পডকাস্ট কো-হোস্ট করেন। এই পডকাস্ট জলবায়ু সংক্রান্ত জটিল বিষয়গুলোকে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করে।
তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একজন তরুন এক্সপ্লোরার হিসেবেও কাজ করছেন।
জলবায়ু সমস্যা একটি জটিল, ব্যাপক ও ভীতিকর বিষয়। ভয়ের বদলে আমরা বিষয়টিকে সহজাত আগ্রহের জায়গা থেকে বিবেচনা করতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের পৃথিবীর জন্য যা কিছু ভালো নয়, তার বিনাশ ও যা কিছু ভালো সেগুলোর বিকাশ করতে পারি।
কুইয়ুন উ
মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী
জেনিফার উচেন্দু প্রতিষ্ঠিত তরুণদের সংগঠন 'সাস্টি ভাইবস' টেকসই উদ্যোগগুলোকে কার্যকর, জীবনমুখী ও জনপ্রিয় করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
উচেন্দু আফ্রিকানদের, বিশেষ করে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু সংকটের প্রভাবগুলি অনুসন্ধানের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
২০২২ সালে তিনি দ্য ইকো-অ্যাংজাইটি আফ্রিকা প্রজেক্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এটি গবেষণা, অ্যাডভোকেসি এবং জলবায়ু-সচেতন সাইকোথেরাপির মাধ্যমে আফ্রিকানদের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নেতিবাচক মানসিক আবেগ নিয়ে কাজ করে।
উচেন্দু এমন মানুষ ও সংস্থার সাথে কাজ করেন যারা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নেতিবাচক মানসিক আবেগ নিয়ন্ত্রণের মতো কঠিন কাজটি সম্পর্কে আগ্রহী।
জলবায়ু সংকট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি নানা ধরণের আবেগের মুখোমুখি হই। আমি ধীরে ধীরে এটি মেনে নিতে শিখছি যে আমি কখনই এই বিষয়ে যথেষ্ট কাজ করতে পারব না, তবে আমি নিজের সর্বোচ্চটা করতে পারি। অন্যদের আবেগের সাথে সংহতি প্রকাশ করা আমাকে জলবায়ু সংক্রান্ত অনুভূতিগুলির মর্যাদা রক্ষা করতে সাহায্য করে।
জেনিফার উচেন্দু
পশুচিকিৎসক
পুরস্কারজয়ী উগান্ডান পশুচিকিৎসক এবং সংরক্ষণবাদী গ্ল্যাডিস কালেমা-জিকুসোকা দেশের বিপন্ন মাউন্টেন গরিলাদের বাঁচাতে কাজ করছেন, যাদের আবাসস্থল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
তিনি কনজারভেশন থ্রু পাবলিক হেলথের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। এটি একটি এনজিও যা মানুষ, গরিলা এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীকে একসঙ্গে বসবাস করার সুযোগ করে দিয়ে জীববৈচিত্র রক্ষার পক্ষে কাজ করে, পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য এবং আবাসস্থল উন্নত করে।
তিন দশকে তিনি মাউন্টেন গরিলাদের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৫০০-এ উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন, যা তাদের 'অতিবিপন্ন' প্রাণী থেকে 'বিপন্ন' পর্যায়ে নামিয়ে আনতে যথেষ্ট ছিল।
২০২১ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা কালেমা-জিকুসোকাকে চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ হিসাবে ঘোষণা করে।
জলবায়ু সংকট নিয়ে আমার আশাবাদের কারণ হল যে জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি মোকাবেলা করার প্রয়োজনীতার ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলা এবং অভিযোজনের জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতি রয়েছে।
গ্ল্যাডিস কালেমা-জিকুসোকা
দাবানল শনাক্তকারী প্রযুক্তির নির্মাতা
চলতি বছর পৃথিবীর কয়েকটি বড় বন ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়েছে। দাবানলের ব্যাপকতা এবং বিস্তারের জন্য অগ্নিনির্বাপনকারীদের প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। সোনিয়া কাস্টনার আগে থেকেই দাবানল শনাক্ত করতে সাহায্য করার জন্য একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
প্যানো এআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে দাবানলের লক্ষণ খুঁজতে ল্যান্ডস্কেপ স্ক্যান করে এবং অগ্নি নির্বাপনকারীদের সতর্ক করেন যাতে দাবানলের খবর পৌঁছানোর জন্য মানুষের উপর তাদের নির্ভর করে থাকতে না হয়।
কাস্টনার এর আগে এক দশকের বেশি সময় ধরে নানাবিধ প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ নিয়ে কাজ করেছেন।
মানুষের অবিশ্বাস্য উদ্ভাবনী ক্ষমতা আমাকে আশাবাদী করে। জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলি মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য প্রযুক্তি এবং ডেটা-চালিত সমাধানগুলির প্রভাব আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।
সোনিয়া কাস্টনার
সমুদ্র বিজ্ঞানী
কার্বণ ধরে রাখা এবং সমুদ্রে মাছের নার্সারি হিসেবে সিগ্রাসের পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু সিগ্রাসের অনেক বাসস্থান এখন ধ্বংস হয়ে গেছে।
লিয়ানি কুলেন-আনসওয়ার্থ প্রজেক্ট সিগ্রাসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সিইও। এটি সিগ্রাস পুনরুদ্ধারে যুক্তরাজ্যের প্রথম প্রকল্প।
প্রকল্পটি বীজ রোপণ প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য একটি রিমোট-কন্ট্রোল রোবট ব্যবহার করে। এই প্রকল্প অন্যান্য দেশকে তাদের জলের নীচের তৃণভূমি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে৷
বিজ্ঞানের নানা শাখায় কাজ করা কুলেন-আনসওয়ার্থের সামুদ্রিক গবেষণায় ২০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বিজ্ঞান-ভিত্তিক সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের কাজ করে আসছেন।
কারো জন্য একা কিছু অর্জন করা অনেক কঠিন। তবে নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ একসাথে কাজ করছে এবং নিজেদের মধ্যে জ্ঞান ভাগ করে নিচ্ছে। আমি নিজে একটা ছোট কাজ করছি যাতে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক আবাসস্থলকে পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে পারি যা আমাদের সমাজ ও পৃথিবীর উপকারে আসবে।
লিয়ানি কুলেন-আনসওয়ার্থ
বায়োগ্যাস ব্যবসায়ী
২০১২ সালে ত্রান গাম ভিয়েতনামের খামারগুলিতে আরও জলবায়ু-বান্ধব জ্বালানির প্রবর্তন করেন।
দুই সন্তানের জননী ত্রান গাম বাজারে চাহিদা দেখতে পেয়ে হ্যানয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন ও পরিচালনার ব্যবসা শুরু করেন, পরে এই কার্যক্রমটি প্রতিবেশী তিনটি প্রদেশে সম্প্রসারিত করেন।
তার প্রকল্পটি গরু ও শূকরের মল, কচুরিপানা এবং অন্যান্য বর্জ্যকে বায়োগ্যাসে রূপান্তর করে কৃষকদের খরচ কমাতে সহায়তা করে, যা প্রাকৃতিক গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি টেকসই শক্তির উৎস বলে বিবেচিত হয়। উৎপন্ন বায়োগ্যাস রান্নাবান্না এবং একটি পরিবার পরিচালনার জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা যায়।
ত্রানের প্রতিষ্ঠানের মত ব্যবসাগুলি স্থানীয় সম্প্রদায়কে যুক্ত করে এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমর্থন তৈরি করে।
আমাদের বেঁচে থাকতে হবে এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে হবে। তাই আমি ব্যায়াম, সুষম ডায়েট এবং ঘুমের প্যাটার্ন বজায় রেখে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে কাছের মানুষদের রক্ষার চেষ্টা করি। এছাড়া আমি মানুষকে প্রাকৃতিক জীবনযাপন করতে অর্থাৎ ফল এবং শাকসবজি নিজেরাই উৎপাদন করতে এবং রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের বিপক্ষে প্রচার করতে বলি।
ত্রান গাম
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ
একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিমনিট গেব্রু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ডেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক। তার এই ইন্সটিটিউট স্বাধীন ও কমিউনিটি-ভিত্তিক এআই গবেষণার জন্য একটি স্থান যা বিশাল প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাবমুক্ত বলে পরিচিত।
তিনি চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তিতে সম্প্রদায়গত ভেদাভেদের সমালোচক। গেব্রু একটি অলাভজনক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা যেটি এআইতে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের অন্তর্ভূক্তি বাড়াতে কাজ করে।
ইথিওপিয়ার বংশোদ্ভূত এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী আদ্দিসকোডার নামের প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের সদস্য। এটি ইথিওপিয়ার শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখায়।
২০২০ সালে গুগলের এথিকাল এআই দলের সহ-প্রধান হিসাবে কাজ করার সময় তিনি একটি একাডেমিক পেপারের সহ-লেখক হন যা এআই ভাষা মডেল নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সেখানে বলা হয় যে এই মডেল সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক মানুষ এবং স্থানের বিরুদ্ধে কাঠামোগত পক্ষপাতের দোষে দুষ্ট।
এই কাজের পর গেব্রুর গুগল ছাড়তে হয়। গেব্রু পদত্যাগ করেছেন জানিয়ে এসময় প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে যে ওই পেপারে প্রাসঙ্গিক গবেষণাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। তবে গেব্রু জানান কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের বিষয় উত্থাপন করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।
অর্থনীতিবিদ ও নোবেল পুরস্কার বিজয়ী
মার্কিন অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ এবং শ্রম অর্থনীতিবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিন নারী কর্মসংস্থান এবং লিঙ্গভিত্তিক বেতন বৈষম্যের কারণ বিষয়ক কাজে অবদানের জন্য এবছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
তিনি ইতিহাসের তৃতীয় নারী হিসেবে এই পুরস্কারটি পেয়েছেন এবং তিনিই প্রথম নারী যিনি এককভাবে, পুরুষ সহকর্মী ছাড়াই পুরস্কারটি পেয়েছেন।
গোল্ডিন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির হেনরি লী অধ্যাপক এবং তিনি আয় বৈষম্য, শিক্ষা ও অভিবাসনের মত বিষয়ে গবেষণা করছেন।
তার কয়েকটি সর্বোচ্চ প্রভাবশালী গবেষণাপত্রে নারীদের পেশা ও পরিবারের ইতিহাস অনুসন্ধান এবং নারীদের পেশা ও বিয়ে সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের উপর জন্মনিয়ন্ত্রক বড়ির প্রভাবের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
বিজ্ঞানী
ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা সুসান চোম্বা জানান শৈশবে মধ্য কেনিয়ার কিরিনিয়াগা কাউন্টিতে দারিদ্রের সাথে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা তাকে অন্যদের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।
বন সংরক্ষণ, ল্যান্ডস্ক্যাইপ পুনরুদ্ধার এবং আফ্রিকার খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে মূলত কাজ করেন তিনি।
কঙ্গো অববাহিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় বন থেকে শুরু করে শুষ্ক পশ্চিম আফ্রিকান সাহেল পর্যন্ত বা পূর্ব আফ্রিকায় কাজ করেন চোম্বা। তিনি প্রান্তিক কৃষকদের বিশেষ করে মহিলা এবং যুবকদের জমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়ে সাহায্য করেন।
চোম্বা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা বিভিন্ন সরকার ও গবেষকদের সাথে ভাগাভাগি করেন।
বিশ্বনেতাদের, বিশেষ করে যাদের দেশ কার্বন নিঃসরণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী তাদের নিষ্ক্রিয়তা আমাকে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য করে। ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মতো অর্থনৈতিক শক্তিও রয়েছে তাদের, তবে টাকা, ক্ষমতা আর রাজনীতির জন্য তারা সেটি করতে পারে না। এই কষ্ট ভুলতে আমি আফ্রিকাজুড়ে নারী ও তরুণদের সাথে প্রকৃতি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার, আমাদের খাদ্য ব্যবস্থা এবং নীতির পরিবর্তনের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে রাখি।
সুসান চোম্বা
সাউন্ড রেকর্ডিস্ট
হাতে টেপ রেকর্ডার নিয়ে ইজাবেলা পোল্যান্ডে অবস্থিত ইউরোপের প্রাচীনতম এবং অন্যতম সংরক্ষিত বনগুলির মধ্যে একটির অসাধারণ শব্দ রেকর্ড করে বেড়ান।
ইজাবেলার এই ফিল্ড রেকর্ডিস্ট পেশায় আসা অস্বাভাবিক শুধু এই কারণে নয় যে তিনি একজন তরুণী হয়েও পুরুষপ্রধান একটি ক্ষেত্রে কাজ করতে এসেছেন, বরং এজন্যেও যে তিনি জন্মান্ধ।
১২ বছর বয়সে ইজাবেলার হাতে তার পরিবার একটি টেপ রেকর্ডার তুলে দেয়ার পর থেকে, পাখির গানের প্রতি তার একধরণের বিশেষ সংবেদনশীলতা তৈরি হয়। শুধুমাত্র শব্দ শুনেই তিনি ওই প্রাণীর প্রজাতি সনাক্ত করতে পারেন।
তিনি বিশ্বাস করেন যে প্রাকৃতিক শব্দ যা "সমস্ত ভালো, সৌন্দর্য এবং সান্ত্বনা" নিয়ে আসে, সেটা কোন ভেদাভেদ ছাড়া অন্যের সাথে ভাগ করে নেয়া একটি বিশেষ কাজ।
বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইন্সিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) সহযোগী অধ্যাপক চানান দাদেভিরান সম্প্রতি প্রারম্ভিক সময়ে স্তন ক্যান্সারে শনাক্ত করা যায় এমন পরিধানযোগ্য আল্ট্রাসাউন্ড প্যাচ আবিস্কার করেছেন।
তার এক আত্নীয়া তাকে এই কাজে অনুপ্রেরনা দেন যার নিয়মিত ক্যান্সার পরীক্ষা করা স্বত্ত্বেও ৪৯ বছর বয়সে এসে শেষ পর্যায়ের স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। মাত্র ছয় মাস পরই তিনি মারা যান।
তার আত্নীয়ার বিছানার পাশে বসেই দাদেভিরান একটি রোগনির্ণয়কারী যন্ত্রের খসড়া বানিয়ে ফেলেন যেটা অন্তর্বাসের মধ্যে জুড়ে দিয়ে স্তন ক্যান্সারের উচ্চ ঝুকিতে থাকা ব্যাক্তিদের আরও ঘন ঘন যাচাই করার সুযোগ প্রদান করে। এই প্রযুক্তি দিয়ে লাখো মানুষের জীবন বাচানোর সম্ভাবনা আছে।
চিকিৎসক
ইউরোপের মধ্যে গর্ভপাতের ব্যাপারে সবচেয়ে কঠিন কিছু নিয়ম চালু রয়েছে মাল্টায় এবং ন্যাটালি পিসাইলা সেসব নারীদের সাহায্য করেন, যাদের তথ্য ও পরামর্শের প্রয়োজন।
ডক্টরস ফর চয়েস মাল্টা' সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ন্যাটালি গর্ভপাতকে অপরাধ হিসবে গণ্য না করা ও এর বৈধকরণের পাশাপাশি গর্ভনিরোধকের সহজলভ্যতার পক্ষেও কথা বলেন।
পিসাইলা বলেন, মাল্টায় গর্ভপাতে প্রায় সম্পূর্ণরুপে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র একজন নারীর জীবনের ঝুকি থাকলেই গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে নারীরা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়াই বড়ি সেবন করছেন। তিনি একটি হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা করেছেন যেটা নারীদেরকে গর্ভপাতের সময়ে, এর আগে এবং পরেও সহায়তা করে থাকে।
দেশে প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের প্রসারে সাহায্য করতে তিনি ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সীদের জন্য মাই বডিস ফ্যানটাস্টিক জার্নি নামে একটি যৌন শিক্ষামূলক বইও প্রকাশ করেছেন।
অভিযাত্রী গাইড
হিমবাহ স্থানীয় মানুষের পানির সংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঁধার। কিন্তু কলাম্বিয়ায় হিমবাহ দ্রুতই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
কামব্রেস ব্লাংকাস নামক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা মার্সেলা ফার্নান্দেজ ও তার সহকর্মীরা মানুষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরীতে কাজ করে যাচ্ছেন। যে স্থানটিতে এক সময় ১৪ টি হিমবাহ ছিল, সেখানে এখন মাত্র ছয়টির অস্থিত্ব আছে এবং সেগুলোও সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে—এনজিওটি এই বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী করছে।
ফার্নান্দেজ বৈজ্ঞানিক অভিযানের মাধ্যমে এবং পর্বতারোহী, ফটোগ্রাফার, বিজ্ঞানী এবং শিল্পীদের একটি দলকে গঠন করে পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করেন এবং হিমবাহের ক্ষয় রোধ করার জন্য সৃজনশীল উপায় বের করেন।
পাজাবোরদো নামের আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে ফার্নান্দেজ তার দেশের ৫০ বছর ধরে চলতে থাকা অভ্যন্তরীন সশস্ত্র সংগ্রামের সময়কার সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন।
হিমবাহ আমাকে দুঃখ ও শূন্যতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে...আপনি যখন বিষয়টি নিয়ে ভাববেন তখন বুঝতে পারবেন যে এটি অপূরণীয়। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি যাতে কিছুটা অবদান রাখা যায়।
মার্সেলা ফার্নান্দেজ
ডায়েরি লেখক ও টেকসই উদ্যোক্তা
২০১৮ সাল থেকে বায়াং একটি ইকো-ডায়েরি রাখছেন যেখানে তিনি স্থানীয় প্রজাতি এবং জলের উৎসের পরিবর্তন, আবহাওয়ার ও গাছপালার পর্যবেক্ষণ করছেন।
তিনি চীনের কিংহাই প্রদেশে বাস করেন। প্রদেশটির বেশিরভাগ তিব্বত মালভূমিতে অবস্থিত এবং ইতিমধ্যেই অধিক উষ্ণতা, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং মরুকরণের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে।
বায়াং সানজিয়ানিউয়ান উইমেন এনভার্নমেন্টালিস্ট নেটওয়ার্ক নামের একটি সংগঠনের সাথে জড়িত। এছাড়াও তিনি তার সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে টেকসই উদ্যোগের প্রচারক।
লিপবাম, সাবান এবং ব্যাগ সহ নানা পণ্য পরিবেশ বান্ধব উপায়ে তৈরী করেন বায়াং। এর মাধ্যমে স্থানীয় জলের উৎগুলি রক্ষা করতে এবং অন্যদের পরিবেশ বিষয়ক উদ্যোগে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেন তিনি।
ধাত্রী
গতবছর পাকিস্তানে মারাত্মক বন্যার সময় আক্রান্ত এলাকায় ছুটে যান নেহা মানকানি।
দাতব্য সংস্থা মামা বেবি ফান্ডের মাধ্যমে মানকানি এবং তার দল ১৫ হাজারের বেশী বন্যার্ত পরিবারকে জীবন রক্ষাকারী জন্মদান সামগ্রী ও ধাত্রীসেবা প্রদান করেন।
নেহা তার কাজের ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত এলাকা ও পরিবেশ বিপর্যয়ে আক্রান্ত এলাকায় জরুরী সাহায্য প্রদানে বেশী গুরুত্ব প্রদান করেন।
নেহার দাতব্য প্রতিষ্ঠানটি এখন একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কেনার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে, যা উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোর গর্ভবতী মহিলাদের জরুরি চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে নিয়ে যাবে৷
জলবায়ু সংক্রান্ত বিপর্যয়ের মুখে পড়া এলাাকায় ধাত্রীদের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিপদের সময়ে জরুরি সেবা প্রদানের পাশাপাশি জলবায়ু কর্মী। আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই যে নারীরা চরম বিপদের মুহুর্তেও প্রজনন সেবা, গর্ভাবস্থা ও প্রসব পরবর্তী সেবা থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়।
নেহা মানকানি
২০১৪ সালে যখন ইসলামিক স্টেট আইএস তার দেশ ইরাকের একটা বড় অংশ দখল করে নেয়, বাসিমা আবদুল রহমান তখন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন।
দেশটির অনেক শহরই যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মাস্টার্স করে দেশে ফিরে আবদুল রহমান তার ধ্বংসপ্রায় দেশের সাহায্যে ভূমিকা রাখার সুযোগ খুঁজে পান।
তিনি ইরাকের প্রথম সবুজ ভবন উদ্যোগ কেসক্ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেখতে পান যে, সবুজ কাঠামো তৈরি করার অর্থ হল ইরাকের প্রথাগত নির্মাণ পদ্ধতির সাথে সর্বশেষ জ্বালানী-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং উপকরণগুলির সমন্বয় করা।
আজকের ভবন নির্মাণ পদ্ধতি যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতা নিশ্চিত করে সেজন্য কাজ করতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমি প্রায়ই জলবায়ু সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি। আমি অবাক হয়ে ভাবি যে কীভাবে কেউ এর ঝুঁকি কমানোর সমাধানের অংশ না হয়ে শান্তিতে থাকতে পারে।
বাসিমা আবদুল রহমান
বিজ্ঞানী
নারী ও মেয়েরা, তোমরা জলবায়ু সমাধানের অংশ'--এটি ওমানের বিজ্ঞানী রুমাইথা আল বুসাইদীর ২০২১ সালের টিড টকসের শিরোনাম। ১০ লাখেরও বেশিবার ভিউ হওয়া এই আলোচনাটি আরব নারীদের অধিকারের প্রতি তার প্রচারণাকে প্রতিফলিত করে।
আল বুসাইদী আরব ইয়ুথ কাউন্সিল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি অফ ওমানের হয়ে কাজ করেন।
তিনি জলবায়ু-সচেতন বিদেশী সাহায্য প্রদানে বাইডেন প্রশাসনের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও টেকসই পর্যটনে গ্রিনল্যান্ডের সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানো সর্বকনিষ্ঠ ওমানি নারী এবং আরব নারীদের ব্যবসায়ীক আলোচনার দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করার জন্য উইমেনএক্স নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কবল থেকে মুক্তির জন্য নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়ন করা সবচেয়ে বেশী জরুরী। সমাজের বিভিন্ন স্তরে তাদের প্রভাব বিদ্যমান ধারণা এবং কর্মকাণ্ডের পরিবর্তন করবে এবং আমাদের নিজেদের এই আবাসকে রক্ষা করবে।
রুমাইথা আল বুসাইদী
অধ্যাপক, ট্রাফিক সুরক্ষা
দশকের পর দশক ধরে গাড়ি তৈরি করা হয়েছে ক্র্যাশ-টেস্ট ডামি হিসেবে পুরুষের কথা বিবেচনা করে। যদিও পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ক্ষেত্রে নারীরা আঘাত বা মৃত্যুর ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।
ইঞ্জিনিয়ার অ্যাস্ট্রিড লিন্ডার এটিকে পরিবর্তন করার জন্য কাজ করেছেন। নারীর দেহের গড়নের কথা বিবেচনা করে বিশ্বের প্রথম গড়পড়তা আকারের নারী ক্র্যাশ-টেস্ট ডামি তৈরির প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন তিনি।
সুইডেনের জাতীয় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের গবেষণা সংস্থায় ট্রাফিক সেইফটি অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক লিন্ডার বায়োমেকানিকস এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ।
বন ব্যবস্থাপক
ইন্দোনেশিয়ার রক্ষণশীল আচে প্রদেশে নারীদের নেতা হওয়া অকল্পনীয় একটা বিষয়।
সুমিনী যখন বুঝতে পারলেন যে তার গ্রামে বন্যার একটি প্রধান কারণ বন উজাড় করা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও দায়ী, তখন তিনি তার সম্প্রদায়ের অন্যান্য নারীদের সাথে কাজ এ বিষয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
তার দলটি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিশেষ অনুমতি পায় যা দামারান বারু গ্রামের সম্প্রদায়কে ৩৫ বছরের জন্য ২৫১ হেক্টর বনের ব্যবস্থাপনা করার অনুমতি দেয়।
তিনি এখন একটি গ্রামীণ বন ব্যবস্থাপনা ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই ইউনিটের মাধ্যমে তারা অবৈধ গাছ কাটা এবং সুমাত্রার বাঘ, প্যাঙ্গোলিন এবং অন্যান্য বিপন্ন বন্যপ্রানীকে হুমকির মুখে ফেলছে এমন শিকারীদের নিরুৎসাহিত করেন।
বর্তমানে ব্যাপক বন উজাড় এবং বন্যপ্রাণী শিকারের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে বনাঞ্চলের দিকে আমাদের আরো মনোযোগ দিতে হবে। বন বাঁচলেই জীবন বাঁচবে।
সুমিনী
কার্বন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ
টেকসই গতিশীলতার বিষয়ে আগ্রহী হুটুউনেন ফিনল্যান্ডের লাহ্টি শহরকে আরও বেশি পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন করা এবং দক্ষ গতিশীলতা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছেন, ২০২১ সালে এই শহরটিকে ইউরোপের 'সবুজ রাজধানী' হিসেবে মনোনীত করা হয়।
তিনি শহরের অভিনব ব্যক্তিগত কার্বন ট্রেডিং মডেলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা থেকে নাগরিকরা সাইক্লিং বা অন্যান্য পরিবেশ-বান্ধব গণপরিবহন ব্যবহার করে ক্রেডিট অর্জন করতে পারে। এটি বিশ্বের প্রথম অ্যাপ যা এমন সুবিধা দেয়।
তিনি নেটজিরোসিটিসের ক্লাইমেট নিউট্রাল সিটিজের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।নেটজিরোসিটিস এমন একটি সংগঠন যা ইউরোপীয় শহরগুলিকে ২০৩০ সালের মধ্যে জলবায়ু নিরপেক্ষতা (গ্রীণহাউজ নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে নিয়ে আসা) অর্জন করতে সহায়তা করে।
হুটুউনেন অন্যদের টেকসই গতিশীলতা সম্পর্কে আগ্রহী করতে চান। তিনি সাইক্লিংয়ের একজন উদ্যোগী প্রচারক, যেটাকে তিনি নগরপরিবহনের ভবিষ্যত হিসেবে বিবেচনা করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন শহরে এমন অসাধারণ মানুষ রয়েছেন যারা তাদের নাগরিকদের জন্য আরও টেকসই জীবনযাপনের ধারনা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছেন। আপনিও অংশ নিন এবং এই রূপান্তরের অংশ হোন!
আনা হুটুউনেন
বিবিসি ১০০ নারী প্রতিবছর বিশ্বের প্রভাবশালী এবং প্রেরণাদায়ী ১০০ জন নারীর তালিকা প্রকাশ করে। আমরা ডকুমেন্টারি, ফিচার এবং সাক্ষা্ৎকারের মাধ্যমে তাদের জীবন এবং কাজকে তুলে ধরি- যে গল্পগুলোর কেন্দ্রে থাকেন নারীরা।
ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক এবং টুইটারে ফলো করুন বিবিসি ১০০ নারী। আপনি নিজেও এতে অংশ নিন #BBC100Women হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে।
বিবিসির বিভিন্ন ভাষা বিভাগ এবং মিডিয়া অ্যাকশনের পরামর্শ এবং নিজেদের গবেষণা থেকে বিবিসি ১০০ নারী বিভাগ একটি ছোট তালিকা তৈরি করে।
আমরা এমন সব নারীদের খুঁজেছি, যারা গত ১২ মাসে তাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা সংবাদ তৈরি করেছেন অথবা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে প্রভাবিত করেছেন, অথবা তাদের সমাজকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছেন যা হয়তো সংবাদে আসেনি।
আমরা একটি তালিকা বাছাই করেছি এ বছরের প্রতিপাদ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে - জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্বব্যাপী নারী-কিশোরীদের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব। সেই তালিকা থেকে জলবায়ু নিয়ে কাজ করা ও অন্যান্য পরিবেশ বিষয়ের নেতৃত্ব দেয়া ২৮ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেছি আমরা।
তালিকাটিতে আমরা এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছি যাতে সকল সমাজের সকল স্থরের প্রতিনিধিত্ব থাকে। আমরা এমন সব বিষয় তুলে এনেছি যা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে এবং এমন নারীদের মনোনীত করেছি যারা তাদের নিজেরা পরিবর্তন নিয়ে এসেছেন।
তালিকাটি আঞ্চলিকভাবেও যেন প্রতিনিধিত্বমূলক এবং নিরপেক্ষ হয় তাও বিবেচনা করা হয়েছে। এই তালিকায় থাকার ব্যাপারে প্রত্যেক নারী সম্মতি দিয়েছেন।